অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে ইন্টারনেট বড় বাধা
১৭ জুন ২০২০ ২৩:৫০
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই চলছে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ গ্রাম এলাকায় শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের পর্যাপ্ত গতি পান না। অনেক শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট কেনার সামর্থ্যও নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সরকারকে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাদাতারাও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন প্যাকেজ আনতে পারে।
বুধবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে ‘অনলাইনে পড়াশোনা এবং বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এমএকে জিলানী। আলোচনায় অতিথি ছিলেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, যুক্তরাজ্যের সারেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রাইসা বাশার ও বুয়েটের শিক্ষার্থী নুসাইবা নওরী নাসির।
আলোচনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই। গ্রামে যথেষ্ট পরিমাণে ভালো ইন্টারনেট নেই। ইন্টারনেটের গতি পেতে খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। এসব দিকে কিছু সমস্যা আছে। যে ক্লাসগুলো অনলাইনে হচ্ছে, সেগুলো রেকর্ড করে শিক্ষার্থীদের দিলে তারা লাভবান হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় আগে থেকে যুক্ত থাকায় কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল হয়েছে। তবে ব্যবহারিক ক্লাসের ক্ষেত্রে ল্যাব ছাড়া উপায় নেই।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, এক সেমিস্টারে একেকজন শিক্ষার্থীর ইন্টারনেটের পেছনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। তাই ফোন কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্যাকেজ করতে পারে। একইসঙ্গে অনলাইনে ক্লাস করাতে গিয়ে আমরা যেসব সমস্যায় পড়েছি, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা সেগুলো অতিক্রম করার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ঠিক এখন বা আগামী একমাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া সম্ভব হলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম খুব বেশি প্রয়োজন হতো না। কারণ চার মাস বা এর কাছাকাছি সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে পরবর্তী সময়ে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। ফলে এখন পর্যন্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তবু আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হবে, কারণ করোনার এই প্রভাব আরও বেশি সময় ধরে চলবে। ফলে আমাদেরও অনলাইনে যেতেই হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত নই।
তিনি বলেন, অনলাইনে যারা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে, তারা আগেই থেকেই কোনো না কোনোভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুক্ত ছিল না। অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর জন্য প্রস্তুত নয়। এটাকে খারাপভাবে দেখারও সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, এখন আসলে আমাদের জরুরি পরিস্থিতি হিসেবে অনলাইনে ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। তবে ইন্টারনেটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গ্রামের। ফলে কিছু সমস্যা তো থাকছেই। যেসব শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে, তাদের কিভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে সমস্যা থাকলেও আপাতত অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতেই হচ্ছে। এছাড়া আমরা অনলাইন পদ্ধতিতে যাব নাকি আরও কিছু সময় দেখব, সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ করোনাভাইরাস পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবসান না ঘটলে তো আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে বলতে পারি না।
যুক্তরাজ্যের সারেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রাইসা বাশার বলেন, বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের জন্য টাকা দিচ্ছে। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শতাংশ ওয়েভার দেওয়া হচ্ছে। প্রাকটিক্যাল ক্লাসগুলো অনলাইনে করা সম্ভব না। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার ব্যবস্থা আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
বুয়েটের শিক্ষার্থী নুসাইবা নওরী নাসির বলেন, আমরা কেউই চাই না আটকে থাকতে। আমরা চাই সবাই মিলে এগিয়ে যেতে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সমস্যা। গ্রামে বেশি সমস্যা। আর প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা বিলাসিতা। আর ক্লাস করার জন্য বেশি ডেটা প্রয়োজন হয়, সবার পক্ষে সেটা সম্ভব না। কিছু মানুষকে পেছনে ফেলে অন্যদের এগিয়ে যাওয়াটা সুফল আনবে না। বুয়েটের বেশির ভাগ ক্লাসে ল্যাব প্রয়োজন। আমাদের শতভাগ শিক্ষার্থী যেন অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগটা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
অনলাইন শিক্ষা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ইন্টারনেট সারাবাংলা ফোকাস