আমি পদত্যাগে সম্মতি দেইনি: বাবুনগরী
১৮ জুন ২০২০ ০০:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার সহকারি পরিচালক পদ থেকে সরাসরি অব্যাহতি নেওয়া বা পদত্যাগের কোনো সম্মতি প্রকাশ করেননি বলে দাবি করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
বুধবার (১৭ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জুনায়েদ বাবুনগরী এ দাবি করেন। বাবুনগরীর পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারি (পিএ) ইনামুর রহমান বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এর আগে বুধবার সকালে মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম শুরা কমিটির বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাদরাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী।
বিকেলে মাদরাসার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মাদরাসার সহকারি পরিচালকের পদ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরী অব্যাহতি চেয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। শুরা কমিটির সদস্যরা ইস্তফাটি গ্রহণ করেছেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর স্থলে শুরা সদস্যরা জ্যেষ্ঠ মুহাদ্দিস শেখ আহমদকে সহকারি পরিচালক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। মহাপরিচালকের অবর্তমানে পরবর্তী শুরা কমিটির বৈঠকের আগ পর্যন্ত শেখ আহমদ সেই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
হাটহাজারী মাদরাসার নেতৃত্বে পরিবর্তন, সরলেন বাবুনগরী
রাতে পাল্টা বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ‘মাদরাসার মজলিসে শুরার বৈঠকের শেষ পর্যায়ে কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাকে ডাকা হয়। সেসব বিষয়ে আমি আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ও শুরার সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বৈঠকে শুরার সদস্যদের নিকট মুঈনে মোহতামীমের (সহকারি পরিচালক) পদ থেকে পদত্যাগ চাওয়া বা পদত্যাগের বিষয়ে কোনো ধরনের সম্মতি আমি প্রকাশ করিনি। বৈঠকে আমাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে শুরার সদস্যরা কিছুই বলেননি। বৈঠক শেষ হওয়ার অনেক পরে একজন শুরা সদস্য আমাকে অব্যাহতির বিষয়টি জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, পদত্যাগের সম্মতি প্রকাশ করায় আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ভিত্তিহীন। আমি শুরার সদস্যদের কাছে পদত্যাগ চাইনি।’
প্রায় ৩৪ বছর ধরে এই কওমি মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে রয়েছেন শাহ আহমদ শফী। একইভাবে দীর্ঘসময় ধরে মাদরাসার সহকারি পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন বাবুনগরী।
প্রায় শতবর্ষী শাহ আহমদ শফী সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় মাদরাসার পরিচালনা পরিষদে রদবদলের গুঞ্জন উঠে। এ নিয়ে মাদরাসায় দু’টি পক্ষ তৈরির খবরও আসে গণমাধ্যমে। মাদরাসায় কর্তৃত্ব নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানের একপক্ষে ছিলেন আহমদ শফীর অনুসারীরা এবং আরেকপক্ষে বাবুনগরীর অনুসারীরা। এ প্রেক্ষাপটে জরুরি বৈঠকে বসেছিল শুরা কমিটি। তবে বুধবার বিকেলে ও রাতে পাল্টাপাল্টি বিবৃতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে এলো।
প্রবীণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বেই প্রায় একযুগ আগে গঠিত হয়েছিল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই আহমদ শফী সংগঠনটির আমীর এবং জুনায়েদ বাবুনগরী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জুনায়েদ বাবুনগরী ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও সমাবেশের কর্মসূচির পর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। রক্তক্ষয়ী ওই কর্মসূচির পর বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন থেকেই তিনি তীব্রভাবে সরকারবিরোধী এবং জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পান।