গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন: গতি নেই, তবু বাড়ছে মেয়াদ-ব্যয়
১৮ জুন ২০২০ ০৮:১৯
ঢাকা: ‘বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে গতি নেই। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৫৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এ অবস্থায় ফের এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে আড়াই বছর। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে ১৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ জন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এরই মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষে আগামী রোববার (২১ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ৯টি প্রকল্প এদিন একনেকে উপস্থাপন করা হবে। ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় গণভবন থেকে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, বৃহত্তর পটুয়াখালী এলাকার জন্য মূল প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তীতে মেয়াদ না বাড়লেও ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন করা হয়। এবার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আড়াই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৯২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫৩২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন নতুন করে ১৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৯১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনীর তুলনায় ব্যয় বাড়ছে ২৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর মূল প্রকল্প ব্যয় বিবেচনায় খরচ বাড়ছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতাভুক্ত কিছু স্কিম প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ঠিকাদার নির্বাচনে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে।
প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ঝূর্ণিঝড়ের সময় নিকটস্থ সাইক্লোন শেল্টারে যাতায়াতের জন্য সংযোগ সড়ক, দু’টি জেলার আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ গ্রোথ সেন্টার বা গ্রামীণ হাটবাজার উন্নয়ন করা হবে। এসবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের জন্য মূল প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ প্রকল্পটি উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রকল্প সংশোধনের যুক্তিযুক্ত কারণ থাকায় বাস্তবতার নিরিখে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটির শুরু থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ফলে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ১০ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ
প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কিছু রাস্তা ও কালভার্টের চেইনেজ পরিবর্তন, সাইক্লোন শেল্টার সংযোগকারী কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অন্তর্ভুক্ত করা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে আরও বেশি কার্যকর করার স্বার্থে পারিপার্শ্বিক গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার প্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন, গ্রাম সড়ক ও কালভার্ট অন্তর্ভুক্ত করা, নির্মাণ যন্ত্রপাতি (রোড রোলার) কেনা, সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে সড়ক প্রতিরক্ষার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার পর্যটন (গঙ্গামতি ও গোড়া পদ্মা সাগড় সৈকত) কেন্দ্রের সংযোগ সড়ক পাকা করার মতো কাজগুলো যোগ হওয়ায় প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম
প্রকল্পটির আওতায় ৪৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৮০ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৪৯২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক, ৭৮ দশমিক ৮০ মিটার উপজেলা সড়কে কালভার্ট, ১৯৭ মিটার ইউনিয়ন সড়কে কালভার্ট, ৯৩৩ দশমিক ৬৩ মিটার গ্রাম সড়কে কালভার্ট এবং সাতটি ঘাটলা নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি ১০টি হাটবাজার উন্নয়ন করা হবে।
কোথায় বাস্তবায়ন হচ্ছে
প্রকল্পটি পটুয়াখালী জেলার সদর, বাউফল, দশমিনা, দুমকি, গলাচিপা, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ এবং রাঙ্গাবালি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া বরগুনা জেলার সদর, আমতলী, বামনা, বেতাগী, পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
একনেকে উঠছে আরও ৮ প্রকল্প
রোববারের একনেক বৈঠকে আরও আটটি প্রকল্প উত্থাপন করা হবে। জানা গেছে, এর মধ্যে একটি প্রকল্প তালিকায় না থাকলেও সরাসরি টেবিলে উপস্থাপন করা। তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো হচ্ছে— জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প; মনু নদীর ভাঙন হতে মৌলভীবাজার জেলা সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা; অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩; হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ; স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার উন্নয়ন; জামালপুর জেলা কারাগার নির্মাণ; গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন, প্রথম সংশোধিত); টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ(হরিদাসপুর)-মোল্লাহাট (ঘোনাপারা) আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুর্নবাসন (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প।
একনেক গোপালগঞ্জ গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক জামালপুর পটুয়াখালী পরিকল্পনা কমিশন পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনু নদী