Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার জানতে হবে: প্রধানমন্ত্রী


১৮ জুন ২০২০ ১৪:৪৮

ফাইল ফটো

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার, সেই অধিকার আমারা পেয়েছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমাদের সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এই সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানো, অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করব- সেগুলো আমাদের জানতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামের নৌ জেটিতে বানৌজা সংগ্রামের কমিশনিং অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজটি কমিশনিং করেন তিনি। বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে সংযোজিত হলো নতুন করভেট ক্লাস যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সংগ্রাম’।

বিজ্ঞাপন

কমিশনিং শেষে জাহাজটি আগামী ৯ জুলাই ২০২০ তারিখে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে লেবাননের উদ্দেশে যাত্রা করবে। লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিশ্বশান্তির দূত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। নতুন এ যুদ্ধজাহাজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন দেশ সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে সেটাই আমাদের কামনা ছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন সরকারে আসি তখন উদ্যোগ ছিল, কীভাবে আমাদের দেশের বিভিন্ন বাহিনীকে আরও উন্নত করে গড়ে তুলব। কারণ পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দেখেছি, আমার বাবার কী স্বপ্ন ছিল। তিনি প্রায়ই গল্প করতেন। কাজেই আমি সেভাবেই তার আদর্শ নিয়েই যাত্রা শুরু করি। তখন আর্থিকভাবে যথেষ্ট সম্পদশালী ছিলাম না। যখন সরকার গঠন করি এই এশিয়ায় তখন ব্যাপকভাবে মন্দা চলছে। ওই অবস্থায় নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ব্রিগেড বানৌজা বঙ্গবন্ধু কিনি। সেইসঙ্গে নৌবাহিনীকে আরও সুসংগঠিত ও সুজ্জিত করার উদ্যোগ নেই।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে ২০০৯ সালে আমরা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করি। তখন থেকে এ পর্যন্ত আমরা সরকারে আছি। আমরা জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের করা প্রতিরক্ষা নীতিমালার ভিত্তিতে ফোর্সে গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ভিত্তিতে প্রত্যেকটা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। এভিয়েশন সিস্টেম যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এখন আমাদের নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক।

মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধেও নৌবাহিনীর সদস্যরা জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। অপারেশন জ্যাকপট অনেকে জীবনও দিয়েছেন। এত সীমিত জিনিস নিয়ে, ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, যা এখন চিন্তাও করা যায় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা। এই সমুদ্রসীমা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল আমাদের। প্রথমবার ৯৬ সালে সরকারে এসে এ ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বেশকিছু কাজ করে যাই। দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসি তখন আরও উদ্যোগ নিই। এই সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার, সেই অধিকার আমারা অর্জন করি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমাদের সমুদ্রসীমা আমরা অর্জন করেছি। এই সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানো, অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদ কীভাবে ব্যবহার করব, সেগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্রবাহিনী তথা প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান (নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনী) যেন আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন হয়। পাশাপাশি এই সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এ জন্য নিজেদেরও কিছু শিখতে হবে। প্রস্তুত হতে হবে। টেকনোলজি জানতে হবে, যেন আগামীতে আমাদের জাহাজগুলো নিজেরাই তৈরি করতে পারি। প্রয়োজনে আমরাই যেন এক্সপোর্ট করতে পারি সে চিন্তা মাথায় রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল খুব ভালোভাবেই। দারিদ্রসীমা যেটা ৪০ ভাগে ছিল সেটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এই অদৃশ্য শক্তির আক্রমণে পুরোবিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে। অর্থনীতি স্থবির, যাতায়াত স্থবির, সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই একটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে কেউ লড়াই করতে পারছে না। অতি শক্তিশালী অস্ত্রধারী দেশ হোক বা অতি অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ অথবা একেবারে দরিদ্র দেশ হোক বা উন্নত দেশ হোক সবাই এখন একই অবস্থায় পড়ে গেছে। আমরা চাই, এই অবস্থা সারাবিশ্ব মুক্তি পাক। আর আমরাও যেন মুক্তি পাই।’

নিজেকে সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এর মাধ্যমে আজ চিটাগং না গিয়েও উদ্বোধন করতে পারলাম। এই কমিশনিংয়ে অংশ নিতে পারলাম। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি বলেই সম্ভব হয়েছে। তারপরও বলব, এটাতে আসলে মন ভরে না। নিজে উপস্থিত থাকার আলাদা একটা আনন্দ আছে। সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলাম। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। ওখানে যাব। আবার দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগেই বলেছি, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। যেটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। কাজেই সেই নীতি নিয়েই আমরা চলব। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। কাজেই যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার দরকার হবে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সবসময় সেখানে থাকবে। আমরা সেটা সবসময় করে যাব জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ হিসাবে। এটা আমাদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা শান্তি চাই- এটা যেমন সত্য, আবার কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা করে সেটা যেন মোকাবিলা করতে পারি; সেজন্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলতে চাই।

করোনা ভাইরাসের সময় নিজকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংগ্রাম করে, যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। কাজেই সংগ্রামের পথেই থাকতে হয়। এখন আবার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।’ বানৌজা সংগ্রাম’র সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ এই ভাইরাস থেকে বাংলাদেশে একদিন মুক্তি পাবে। সারাবিশ্ব মুক্তি পাবে। আবার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। নৌবাহিনীর যাত্রা অব্যাহত থাকুক। আপনাদের জীবন সুন্দর হোক সার্থক হোক।’

এর আগে চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এফ এম আরিফুর রহমান ভূঁইয়ার হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধজাহাজটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল। কমিশনিং ফরমান তুলে দেওয়ার আগে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কমিশনিং নৌবাহিনী প্রধানমন্ত্রী বানৌজা সংগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর