সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু: রহস্য উদঘাটনে তৎপর একাধিক তদন্ত কমিটি
১৯ জুন ২০২০ ১২:০৫
ঢাকা: আফতাবনগরের ফ্ল্যাটে ছয় মাস আগে এক বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর একমাত্র ছেলে স্বপ্নীল পিয়াস। ছয় মাস পর ওই একই ফ্ল্যাটে ফের আগুন। এবার দগ্ধ নান্নু নিজেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনিও। একই ফ্ল্যাটে ছয় মাসের ব্যবধানে দুই অগ্নিকাণ্ড এবং দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। আর সেসব প্রশ্নের জবাব পেতেই দাবি ওঠে সুষ্ঠু তদন্তের।
কিভাবে আগুন লাগলো, কিভাবে সে আগুনে দগ্ধ হলেন নান্নু— সেসব জানতে তদন্তের জন্য গঠিত হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন- সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যু
গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার হুমায়ুন কবির বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সাংবাদিক নান্নুর বাড়ির ভিডিও ফুটেজ জব্দসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নান্নুর বাসা ও ভবনের লোকদেরও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। আমরা জানতে পেরেছি, ঘটনার রাতে ওই বাসায় সাংবাদিক নান্নু ছাড়াও স্ত্রী পল্লবী ও শাশুড়ি ছিলেন।
উপকমিশনার হুমায়ুন বলেন, সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়ি এই মুহূর্তে গ্রামের বাড়ি আছেন। নান্নুর মৃত্যু রহস্য, ওই রাতে ফ্ল্যাটে ঠিক কী ঘটেছিল, অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না— এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে বিভিন্ন ঘটনা জানতে চাওয়া হবে তাদের কাছেও।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিজ ফ্ল্যাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তিনটি সংস্থা ১৭ জুন ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ ও আলামত (ক্রাইম সিন) সংগ্রহ করে। একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ। আগুনের সূত্রপাতে গ্যাসের লাইনের কোনো দায় ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদেরও পৃথক টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।
আরও পড়ুন- নিজ বাসায় আগুনে দগ্ধ সাংবাদিক নান্নু, অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’
অন্যদিকে নান্নুর পিচ তাজমহল অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে আগুন লাগার সময়কার অনেক ঘটনাই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু নিয়ে যে রহস্য তৈরি হয়েছে, তা উদঘাটন করাই কমিটির প্রধান কাজ। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরই মধ্যে ফ্ল্যাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ।
ওসি বলেন, গত ১১ জুন রাতে আগুন লাগার সময়ের ওই অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, নান্নু দগ্ধ হওয়ার পর নিজেই শরীরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ওই অবস্থায় তাকে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে ছাদে পানির পাইপ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এরপর নান্নুকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখা গেছে। ১০ তলা বাড়ির নিচ তলায় অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে তিনি চেয়ারে ১০ মিনিটের মতো বসে ছিলেন। ওই সময় ১০ তলার ১০/বি ফ্ল্যাটের মালিক তার গাড়ি বের করে নান্নুকে নিয়ে যান হাসপাতালে।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সাংবাদিক নান্নু দগ্ধ অবস্থায় ভবনের ছাদে যান, পাইপ নিয়ে আবার বাসায় আসেন। এরপর নিচে নামেন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী ফ্ল্যাট মালিকের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসব ঘটনার মধ্যে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী কিংবা শাশুড়িকে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন- বন্ধ ঘরের দরজা খুলে সুইচ দিতেই বিস্ফোরণ
তিনি আরও বলেন, নান্নুকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়ার কমপক্ষে ২৫ মিনিট পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নান্নুর স্ত্রীকে দেখা যায়। স্বামী অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় স্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল, ওই রাতে আসলে আর কী কী ঘটেছিল, তা জানতে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নান্নুর স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বর্তমানে অবস্থান করছেন যশোরে। মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এই মুহূর্তে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনিও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান। হোক। পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।
আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার ১০ তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত ১২ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন।
সাংবাদিক নান্নুকে গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি ওই একই রুমে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাদের একমাত্র সন্তান মিউজিক ডিরেক্টর স্বপ্নীল আহমেদ পিয়াস (২৪) প্রাণ হারান। সে সময় ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু।
অগ্নিকাণ্ড আগুনে দগ্ধ আগুনে দগ্ধ হয়ে মত্যু বাসায় বিস্ফোরণ সাংবাদিক নান্নু