১০৩ দিনে শনাক্ত এক লাখ, শেষ অর্ধেক ১৬ দিনে
১৯ জুন ২০২০ ১৫:০৮
ঢাকা: দেখতে দেখতে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেল। আর সংক্রমণের যে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের দেশে সংক্রমণের হার এখনো ক্রমেই বাড়ছে। যে কারণে এক লাখ সংক্রমণ শনাক্ত করতে ১০৩ দিন সময় লাগলেও শেষ অর্ধেক, প্রায় ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে শেষ ১৬ দিনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে সংক্রমণের গতি সামনের দিনে আরও বাড়বে। অন্তত জুলাই মাস পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্তের ঊর্ধ্বগতি থাকতে পারে। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশে কোভিড রোগীর অবস্থান শনাক্ত করার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩ হাজার ৮০৩ জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে করে দেশে লক্ষাধিক মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হলো।
প্রথম ৫০ হাজার সংক্রমণ ৮৭ দিনে
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর প্রথম ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৫৮ দিন। ৪ মে ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরের ১০ হাজার সংক্রমণ অবশ্য শনাক্ত হয় মাত্র ১১ দিনে, দিনটি ছিল ১৫ মে। এরপর প্রতি ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে ধারাবাহিকভাবেই আরও কম সময় লেগেছে।
২০ হাজারের পর ৩০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২২ মে (তৃতীয় ১০ হাজার শনাক্ত হয় ৭ দিনে)। এরপর ২৮ মে ৪০ হাজার ও ২ জুন ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে যথাক্রমে ৬ ও ৫দিন। সব মিলিয়ে প্রথম ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৮৭ দিন।
আরও পড়ুন- করোনায় প্রাণ গেল আরও ৪৫ জনের, নতুন শনাক্ত ৩২৪৩
১৬ দিনেই শনাক্ত আরও ৫০ হাজার
২ জুন ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণের গতি আরও বেড়ে যায়। তিন দিন পর ৫ জুন ৬০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ৭০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৯ জুন, এ ক্ষেত্রে সময় লাগে চার দিন। পরের প্রতিটি ১০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতেই সময় লাগে তিন দিন করে। ১২ জুন ৮০ হাজার, ১৫ জুন ৯০ হাজার ও সবশেষ ১৮ জুন এক লাখ সংক্রমণ শনাক্তের মাইলফলক পেরোয় বাংলাদেশ। সে হিসাবে প্রথম ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হতে ৮৭ দিন লাগলেও দ্বিতীয় ৫০ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১৬ দিনে।
মাসভিত্তিক তথ্য যা বলছে
মার্চ: স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত ১০৩ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে গতি ছিল বেশ ধীর। ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর মার্চের বাকি দিনগুলো মিলিয়ে মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৫১ জনের শরীরে। অর্থাৎ শুরুর ২৪ দিনে মাত্র ৫১টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এপ্রিল: এপ্রিলের শুরুতেও গতি ধীর ছিল। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মূলত সংক্রমণ গতি পেতে শুরু করে। দেখা যায়, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ১১৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন শনাক্ত হন ১৬ জন। দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে সংক্রমিত হয়েছেন ১২১ জন (মোট ৮৪৮ জন), তৃতীয় সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৩৩৮ জন (মোট ২৩৭০ জন) ও চতুর্থ সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৪৪০ জন (মোট ৩০৮০) করে শনাক্ত হন। শেষ দুই দিনে কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হন আরও ১২ শতাধিক ব্যক্তি। সব মিলিয়ে ওই মাসে মোট ৭ হাজার ৬১৬ জনের শরীরে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয়। গড়ে প্রতিদিন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২৫৩টি।
মে: এপ্রিলের শেষটা যেখানে, মে মাসের শুরুটাও ঠিক ওখান থেকেই। এপ্রিলে যেভাবে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে সংক্রমণের হার, মে মাসেও সেই প্রবণতা অব্যাহত ছিল। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৪ হাজার ৭৫৮টি (গড়ে প্রতিদিন ৬৭৯টি), দ্বিতীয় সপ্তাহে ৬ হাজার ৪৩৮টি (গড়ে প্রতিদিন ৯১৯টি), তৃতীয় সপ্তাহে ৯ হাজার ৬৪৮টি (গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৩৭৮টি) এবং চতুর্থ সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৮১০টি (গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ৬৮৭টি)। শেষ তিন দিনে আরও ৬ হাজার ৮৩২ জনের শরীরে এই করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় (গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ২৭৭টি)। সব মিলিয়ে মে মাসে মোট সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৪৮৬টি। অর্থাৎ এই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৭৩টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
জুন: মে মাসের পর জুন মাসে সংক্রমণের গতি এতটাই বেড়ে যায় যে সে তুলনায় মে মাসের সংক্রমণের হারকেও কম মনে হতে পারে। এই মাসে এ পর্যন্ত মাত্র ১৮ দিন পার হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১৪ দিনেই সংক্রমণের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে মে মাসকে।
এই মাসের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬১৬ (প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৬৫৯) এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৭৫১ (গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ১০৭)। শেষ চার দিনে আরও ১৪ হাজার ৭৭২ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে (গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৬৯৩ জন)। সব মিলিয়ে জুনের এই ১৮ দিনে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৩৯টি, গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৬৩টি। সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হার না কমলে কেবল জুনেই লক্ষাধিক সংক্রমণ শনাক্ত হতে পারে।
প্রতিরোধ নয়, সার্ভেইল্যান্স প্রয়োজন
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও কোভিড প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এখন আসলে প্রতিরোধের কথা ভেবে লাভ নেই। এখন নজর দিতে হবে সার্ভেইল্যান্সের দিকে। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সার্ভেইল্যান্স এখন জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আগে আরও অনেক দেশেই এক লাখ সংক্রমণ অতিক্রম করেছে। তারা নিশ্চয় কোনো পরিকল্পনা করেছে। আমাদের পরিকল্পনা কী? প্রয়োজনে ওই সব দেশের কার্যক্রম অনুসরণ করতে হবে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতরের উচিত সবাইকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানানো। তা না করতে পারলে কেবল সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
এক লাখ সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর