Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শত বছরের কবরস্থান দখলের পাঁয়তারা, বেহাত হাজার একর খাস জমি


২০ জুন ২০২০ ০৮:০৩

ঠাকুরগাঁও: জেলায় শত বছরের পুরনো কবরস্থান দখলে মাঠে নেমেছে ভূসিদস্যুরা। সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বেংরোল সরকারপাড়া গ্রামে রয়েছে এই কবরস্থানটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারের হাজার হাজার একর সম্পত্তি এরইমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। এখন কবরস্থানও দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারি হিসাবে জেলায় খাসজমির পরিমাণ ১২ হাজার ৮৫৮.০৮৫৪ একর। এর মধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি ৫ হাজার ৭৭৩.১১০৪ একর। আর অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ ৫ হাজার ২৬৬.৩৭৫ একর, পরিত্যক্ত সম্পত্তির পরিমাণ ১ হাজার ৪৬৬.৬৯৫ একর।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগে জানা যায়, বেংরোল সরকার পাড়া গ্রামসহ আশেপাশের ৩টি গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। দেশভাগের আগে থেকেই গ্রামের কেউ মারা গেলে কাঁচপুকুর কবরবাড়ি, ভূতাহার পুকুরপাড়া কবরবাড়ি, ফুটানিবাজার কবরবাড়িতে তাদের দাফন করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি বেংরোল গ্রামের আবুল কাশেম, দবিরুল ইসলাম, সফিরুল ইসলামসহ কয়েকজন শত বছরের গোরস্থান দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ১টি গোরস্থান দখলও করেছে তারা। এসএ এবং সিএস রেকর্ড অনুয়ায়ী এই জমির মালিক ছিলেন হরিপুরের জমিদার হরিবল্লভ রায়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি ভারতে চলে যান। পরে সেই জমি সরকারের ১নং খাস খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত হয়।

বেংরোল গ্রামের তোফায়েল হোসন (৬৫) বলেন, আমার জন্মের পর থেকে থেকে যে জমি খাস জেনে আসছি। সেই জমি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানার হয়? প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ভুয়া কাগজ বানিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে।

গ্রাম্য পুলিশ আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে জেনে আসছি এই কবরস্থানগুলো খাস। কিভাবে জমির ব্যক্তি মালিকানা দাবি করা হচ্ছে তা আমার জানা নেই।’ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই স্থানে ১০ ফিট দূরত্বে দু’টি মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

খাসজমি দখল প্রসঙ্গে খোচাবাড়ী দৌলপুর গ্রামের ভূমিহীন নেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘খাস জমি দখলের ঘটনা শুধু রায়পুরেই ঘটেনি। এধরনের ঘটনা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘটেছে। বড় বড় রাঘব বোয়ালরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাকে দিয়ে কাগজ বানিয়ে ঐতিহাসিক পুকুরসহ হাজার হাজার একর সরকারি সম্পদ দখল করে নিয়েছে।’

একই অভিযোগ করেন জামালপুর ইউনিয়নের ভূমিহীন নেতা নারায়ণ চন্দ্র, নূর ইসলাম, আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মামুন উর রশীদ, রাণীসংকৈলের জাহাঙ্গীর আলম, হরিপুরের আজমলসহ অনেকে।

তবে জমির মালিকানা দাবি করা রায়পুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘এখানে খাস জমিসহ ৩টি দাগে জমি আছে। এই জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন হরিপুরের জমিদার। আমি ভেলাজানের শমসের আলীর কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিকানা দাবি করেছি।’

তবে রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, ‘জমির মালিক কে তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে স্থানীয় ভাবে সালিশের ব্যবস্থা করা হলেও কিছু জেদি লোকের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’ পাশাপাশি মসজিদের বিষয়টি সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও ঠিক নয় বলে জানান।

আইনজীবী আবু সায়েম বলেন, ‘প্রভাবশালীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাল দলিল, জাল কাগজপত্র তৈরি করে প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের দিয়ে কাগজ বানিয়ে নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে যারা ভূমিহীন, মৎস্যজীবী এক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। আবার অনেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক দখল করে খাচ্ছেন।’

জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘খাসজমি বেহাত হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো আমার কানে এসেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়গুলো দেখছেন।’ জমির মালিক কে বা কারা তা কাগজপত্র দেখে ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

কবরস্থান জেলা প্রশাসক ঠাকুরগাঁও ভূমিহীন রায়পুর সরকারি কর্মকর্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর