Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের কাছে ‘অসহায়’ অধিদফতর!


২০ জুন ২০২০ ১১:০৫

কুড়িগ্রাম: টেন্ডার দুর্নীতি, বদলি স্থগিতসহ নানা বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার (আশরাফ মজিদ) দুর্নীতির বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকবার বদলির আদেশ হলেও আশরাফ মজিদ কুড়িগ্রাম জেলারেল হাসপাতালেই রয়েছেন দাপটের সাথে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরই এই হিসাবরক্ষরকের কাছে অসহায়, বলেন ভুক্তভুগিরা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, চলতি বছরে মার্চ মাসে আশরাফ মজিদের প্রশাসনিক বদলি হয় রাজশাহী বিভাগের পটিয়া উপজেলায়। অথচ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে যোগদানের কথা থাকলেও সাড়ে তিন মাসেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। বদলি স্থগিত করে তিনি এখনও পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিটি গত ১২ ফেব্রুয়ারির সভার সুপারিশক্রমে আশরাফ মজিদের বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহা-পরিচালকের পক্ষে প্রশাসন পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রশাসনিক বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদেশে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়।

বদলির চিঠি পাওয়ার পর আশরাফ মজিদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগিতা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বদলি স্থগিত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদ। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় থাকার সুবাদে আশরাফ মজিদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আর এই সিন্ডিকেটে খোদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।

এই সিন্ডিকেট হাসপাতালে ওষুধ চুরি করে বিক্রি ছাড়াও টেন্ডার জালিয়াতিসহ আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি হাসপাতালের মালামাল সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় ঠিকাদারদের চাপের মুখে তা বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২৯ জন ক্লিনার এবং সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের টেন্ডারও গোপনে  করা হয়। এই নিয়োগে ২০ জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। হিসাবরক্ষক আশরাফ মজিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হওয়ার রংপুর এবং ঢাকা থেকে একাধিক দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত শুরু হয় যা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।

তবে এই বিষয়ে আশরাফ মজিদকে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কয়েকটি জায়গায় কিছু অনিয়ম হয়েছে। দীর্ঘদিনের কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের এই প্রাকটিস রাতারাতি দূর করা সম্ভব না। তবু চেষ্টা করা হচ্ছে। ঠিকাদারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আমি একটি টেন্ডার বাতিল করেছি। আউটসোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগের টেন্ডারটি নিয়েও নানা জটিলতা দূর করার চেষ্টা চলছে।’ তবে হিসাবরক্ষক আবদুল মজিদের দুর্নীতি ও বদলি স্থগিতের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন –

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জনবল নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গোপন টেন্ডারে কাজ দেওয়ার অভিযোগ

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য অধিদফতর হিসাবরক্ষক

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর