Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান গুরুত্ব পায়নি’


২০ জুন ২০২০ ১৮:১৩

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও কর্মসংস্থানের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, আগামী বাজেটে যেখানে স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, সে সময় শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ বাবদ ২৭ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা আর কোভিড মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয়ের অগ্রাধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২০ জুন) ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বিশ্লেষণ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডি পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সারেবক গর্ভন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সিপিডি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেট গাতনুগতিক। প্রয়োজন ছিল চারটি খাত স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া। কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন হয়নি।

সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রশংসনীয়ভাবে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে দরকার ছিল সংস্কারের পদক্ষেপ। এই সংস্কার আগামী কয়েকবছর চালাতে হবে ‘ প্রস্তাবিত বাজেটে ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি দুর্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেট কয়েক মাস পর পর সংশোধন করা যেতে পারে।’

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়ের ৩১ শতাংশই যায় সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ। কিন্তু তা কখনোই এর আওতায় দেখানো হয় না। এবার কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের জন্য যে নগদ সহায়তা দেওয়া হলো, তা মূল বরাদ্দের মাত্র ২ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে একবারে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এই বরাদ্দের অংক ও পরিসর আরও বাড়ানো উচিত। এছাড়াও অনেক যুবক বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে; যাদের যাওয়ার কথা ছিল, তারাও এখন যেতে পারবে না। এই যুবকদের জন্য গ্রামে সরকারি কর্মসূচি আরও বাড়ানো দরকার।’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে, কৃষিতে ফলন ভালো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নানা ধরনের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজেটে কোভিট-১৯ মোকাবিলার পাশপাশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তজার্তিক সংস্থা বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে সহায়তা করছে। ফলে বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেট যেন জনবান্ধবমুখী হয়। সাধারণ মানুষ যেন উপকার পায়। কারণ ইতিমধ্যে দারিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এর কারণে দেশের রফতানি, রেমিট্যান্স কমে যাওয়াসহ বেশিরভাগ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংক পুঁজিবাজারসহ দেশের আর্থিক খাতের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। করোনার প্রার্দুভাবের কারণে এ সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান সংকট মোকাবিলায় ব্যাংক, পুঁজিবার ও রাজস্ব এ তিনটি খাতের সংস্কারের প্রস্তাব থাকা দরকার।’

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের জীবন রক্ষার চেয়ে বড় কিছু নেই। করোনা পরিস্থিতির আগেই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। করোনার সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু বাজেটে এসব বিষয়ে কোনো নজর দেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটের মুল ফোকাস হওয় দরকার ছিল মানুষের জীবন বাঁচানো, কর্মসংস্থান বাঁচানো। আয় হারানো মানুষগুলোকে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই।’

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধির বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি মানুষের আয়ের বৈষম্য বাড়ে, কর্মংস্থান না বাড়ে, সম্পদের বৈষম্য ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধি দিয়ে কি হবে?’

তিনি বলেন, ‘গত ৪০ বছরের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো চীন তাদের বাজেটে কোনো প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করেনি। বরং বাজেটে তারা কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের বাজেটেও তা হওয়া উচিত।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রবৃদ্ধিকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুটি বাজেট দেওয়ার দরকার ছিল। প্রথমটি বাজেটটি হওয়া দরকার ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের। যেখানে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল। পরবর্তী সময়ে কোভিড পরিস্থিতি দেখে জানুয়ারিতে বাকি ছয় মাসের বাজেট দিলে ভালো হতো।’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যারা কর্মসংস্থান হারিয়েছে তাদের আগামী ছয়মাস নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া দরকার।’

২০২০-২১ অর্থবছর বাজেট সংলাপ সিপিডি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর