Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসকদের জন্য আলাদা হাসপাতালসহ ১০ দফা দাবি এফডিএসআর’র


২০ জুন ২০২০ ২১:৪৮

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা চিকিৎসকদের জন্য আলাদা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা রাখার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটি (এফডিএসআর)। সংগঠনটির পক্ষে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ দফা দাবি প্রস্তাবনা করে সংগঠনটি।

শনিবার (২০ জুন) ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় পরামর্শ ও কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির উপদেষ্টা ডা. আব্দুর নূর তুষার।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, ‘হয়তো বা দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকরা সেবা নিতে পারেন। কিন্তু যারা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ যুদ্ধে আছেন সেই চিকিৎসকদের জন্য রাজধানীতে সবধরনের সুবিধা সম্বলিত একটি হাসপাতাল প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা দেখছি না। পুলিশ নিজেদের হাসপাতালের বাইরে হাসপাতাল ভাড়া করেছে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য ডিজির কাছে চিঠি দেওয়া হয়। বিভিন্ন পেশার জন্যেও হাসপাতাল ভাড়া করা হয়। রাষ্ট্র যখন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করল, তখন ডাক্তারদের জন্য কেন একটা হাসপাতাল ভাড়া করা হলো না?

এ সময় সংগঠনের মহাসচিব ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন সিলেটে ডা. মঈনের চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যখন প্রয়োজন ছিল তখন একটা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ব্যবস্থা করা যায়নি তার জন্য।’

চিকিৎসকদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে তুলে ধরে ডা. আব্দুর নূর তুষার বলেন, ‘মানহীন মাস্ক, পিপিই সরবরাহের জন্য অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি ডাক্তার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পিপিই পরা এবং খোলার নিয়মে ভুল করার কারণেও এমনটা ঘটেছে। অনেক রোগী কোভিড-১৯ গোপন করে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারও আক্রান্ত হচ্ছেন। সার্জারির সময় অনেক ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে আক্রান্ত হচ্ছে। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসম্মত পিপিইর অভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

মারা যাওয়ার পর প্রণোদনা না দিয়ে সে টাকায় চিকিৎসার দাবি জানিয়ে ডা. আবদুন নূর তুষার বলেন, ‘মরে গেলে তো প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা আছে। সেই প্রণোদনার টাকা দিয়ে ডাক্তারদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে তো আর প্রণোদনার টাকা দিতে হয় না।’

এদিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৪৬ জন চিকিৎসকের মৃত্যুতে গভীর শ্রদ্ধা এবং সারাদেশে সকল স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকল পেশার যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এফডিএসআরের চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসানাৎ মিল্টন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে ডা. মিল্টন বলেন, চিকিৎসক মারা যাওয়ার পর সামান্যতম শোক বা কিছু করতে ডিজি অফিসকে আমরা দেখি না। সামান্য শোক জানানোর ভদ্রতা তারা দেখাতে পারেনি। তারা সব সময় ডাক্তারদের ভুল ধরতে মুখিয়ে থাকে। ডাক্তারদের নকল মাস্ক দেওয়া হলো, সেটাকে তারা ভুল বলল। কিন্তু একজন ডাক্তার ভুল করলে সেটাকে তারা অনেক বড় করে দেখেন। যা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় তার কর্মীদের সঙ্গে করে না।’

সংগঠনটির মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের কিছু বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করা দরকার। তাই এ সংবাদ সম্মেলন। চিকিৎসকদের মনোবলের ওপর আঘাত করা হয়েছে। খুলনায় একজন চিকিৎসককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এখন করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ দিন সংগঠনটির পক্ষ থেকে মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি প্রস্তাবনা করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো-

১. করোনা মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরেও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে তাদের সুপারিশ সময় বেঁধে দিয়ে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

২. করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। প্রয়োজনে সেই দেশগুলো থেকে সহায়তা নিতে হবে।

৩. একই শহরের ভেতরে তিন রঙের জোন না করে বরং পুরো শহর/(জেলা) যেমন: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ হটস্পট শহর/জেলাসমূহে কঠোরভাবে চার সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন পালন করতে হবে। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্র এবং চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যতটা সম্ভব টেস্ট করতে হবে। চার সপ্তাহের শেষদিকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে লকডাউনের পরবর্তী সম্প্রসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

৪. কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে যে সব ডাক্তাররা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রণোদনার অর্থ দ্রুত প্রদান করবার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণকারী বেসরকারি ডাক্তারদের জন্যও প্রণোদনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পরিবার অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

৫. কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করর লক্ষ্যে ‘চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করুন। এই আইনে সকলের মতামত নিন এবং পৃথক আইন করুন। এর সাথে কোন ক্লিনিক, প্যাথলজি ল্যাব বা ব্যবসা পরিচালনাকে সংযুক্ত না করে, কেবল স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করুন। সেইসঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ‘হেলথ পুলিশ’ গঠন এখন সময়ের দাবি।

৬. কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্মত ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী’ বা পিপিই প্রদান করতে হবে। পিপিইর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে তা সহজলভ্য করতে হবে ও মুনাফালোভীদের অসাধু ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৭. সকল চিকিৎসকের ন্যায্য বেতন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বেতন ও বোনাস কর্তন, অন্যায় ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। কম বেতন দিয়ে অতিরিক্ত শ্রমঘণ্টা কাজ করানো বন্ধ করতে হবে।

৮. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মেডিক্যাল শিক্ষাকেও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে।

৯. সারা দেশব্যাপী দরিদ্রদের মধ্যে/চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে/ অন্যদের জন্য ন্যায্যমূল্যে মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করতে হবে।

১০. করোনা মোকাবিলায় প্রত্যেক মানুষের স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের আদেশ মেনে চলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যখাতের বিরাজমান অব্যবস্থা জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি করছে। স্বাস্থ্যখাতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে স্ব-বিরোধী বক্তব্য মানুষকে হতাশ করে এবং এ কারণেই জনগণ লকডাউনসহ নানা বিষয় অমান্য করে। কারণ তারা আস্থাহীনতায় ভুগছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, দীর্ঘদিন যাবত আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রধানমন্ত্রী যেখানেই হস্তক্ষেপ করেন, সেখানে অব্যবস্থা দূর হয়। অথচ তাকে নানা বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত করা হয় না। আমরা দেখেছি তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে মানহীন মাস্ক, ডাক্তারদের আবাসন, গরীবদের মধ্যে সরাসরি অর্থ-বিতরণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি সরাসরি চিকিৎসকদের প্রণোদনা দিয়েছেন এবং সামনে থেকে চিকিৎসকদের উৎসাহ দিয়েছেন। অভিভাবকের মতো সতর্ক করেছেন আবার স্নেহভরে প্রশংসা করেছেন। স্বাস্থ্যখাতের উচ্চপদগুলোতে কিছু পরিবর্তনও এনেছেন। আমরা এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।

এতে আরও বলা হয়, আশা করি তিনি পুরো স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক বিশ্বের মতো করে ঢেলে সাজাবেন। এই কাজে তাকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাখাতে জড়িত সকলে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এফডিএসআর ও তার সাথে সম্পৃক্ত ৪৬ হাজার চিকিৎসক বিশ্বাস করে তিনি বাংলাদেশকে একুশ শতকের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে দিতে সক্ষম। এই কাজে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা তার নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক ডা. শাহেদ ইমরান। এই সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন সংগঠনটির যুগ্ম-মহাসচিব ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ডা. মো. রশিদুল হক, আইন সম্পাদক ডা. অধ্যাপক নোমান চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মঞ্জুর সহ অন্যান্যরা।

১০ দফা আলাদা হাসপাতাল এফডিএসআর দাবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর