পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে: আইজিপি
২২ জুন ২০২০ ১৩:৫৫
ঢাকা: প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে পুলিশি সেবা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশি সহায়তা পেতে জনগণকে এখন পুলিশের কাছে আসতে হয়। তাই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি।
আইজিপি বলেন, ‘এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাই, যাতে জনগণকে পুলিশের কাছে আসতে না হয় বরং পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে। আমাদের দেশের প্রতিটি ইউনিয়নকে একেকটি বিটে ভাগ করে প্রতিটি বিটের দায়িত্বে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করা হবে। তিনি নিয়মিত ওই ইউনিয়নের মানুষের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা ইত্যাদির খোঁজখবর করবেন, প্রতিনিয়ত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন, তাদের মতামত জানবেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবেন এবং কাঙ্ক্ষিত সেবা দেবেন।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেটে বিট পুলিশিংয়ের সাফল্য উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘এসব এলাকায় বিট পুলিশিং সফল হয়েছে। আমরা সারাদেশে বিট পুলিশিং চালু করতে চাই, মানুষের কাছে যেতে চাই, মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই।’
আইজিপি রোববার (২১ জুন) সন্ধ্যায় সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, র্যাব পিবিআই, রেলওয়ে, টুরিস্ট, হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এবং পুলিশ স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদার প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব নির্দেশনা দেন।
সোমবার (২২ জুন) সকালে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
করোনাকালে পুলিশের সেবার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘করোনার সময় জনগণকে আমাদের কাছে আসতে হয়নি। আমরা জনগণের কাছে গিয়েছি, তাদের পাশে থেকেছি, তাদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছি, জীবন বিলিয়ে দিয়েছি। তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি, যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছি, তাদের ধান কাটার ব্যবস্থা করেছি, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির আপনজনরা যখন কাছে আসেনি তখন আমরা তার দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল না, কিন্তু আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি করেছি।’
সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘জনগণের পুলিশ হতে হলে পুলিশকে মাদকমুক্ত হতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদক খাবে না, মাদকের ব্যবসা করবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। বাংলাদেশকে একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে যুথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
আইজিপি বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য অবৈধভাবে কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে কেউ যদি বড়লোক হতে চায়, তাহলে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক, বড়লোক হোক, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু পুলিশে থেকে কোনভাবেই দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকা যাবে না। জনগণকে ভালবাসতে হবে, তাদের পাশে থাকতে হবে, তাদের জন্য কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে সব ধরনের নির্যাতন থেকে বের হয়ে এসে জনগণের পুলিশ হতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর আধুনিক সমরাস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছি উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে তৈরি হতে হবে।’
আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। যারা অসুস্থ রয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।