‘দুর্নীতি করতেই স্বাস্থ্য খাত বাদ দিয়ে মেগা প্রকল্পে প্রায়োরিটি’
২২ জুন ২০২০ ১৭:৫৪
ঢাকা: দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তে সরকার মেগা প্রকল্পকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২২ জুন) দুপুরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
ড্যাবের উদ্যোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসক পরিবারকে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস, মুমূর্ষু রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবারহ, প্লাজমা ডোনার তালিকা প্রণয়ন এবং কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এবারকার বাজেটটা আপদকালীন বাজেট। মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোকে ইকুপ্ট করা হবে। অক্সিজেনের জন্য মানুষ পাগল হয়ে আছে, কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে? সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটার নেই। প্রথম থেকে বলা হয়েছে যে, এসব জরুরি ভিত্তিতে যোগাড় করা হোক, ব্যবস্থা করা হোক। তারা সেটার দিকে কেনো গরজ করেনি।’
‘কারণ, দেশের স্বাস্থ্যখাত তাদের (সরকার) প্রায়োরিটিতে নেই। তারা এই জায়গাটাকে প্রায়োরিটি দেয় না। তাদের প্রায়োরিটি মেগা প্রকাল্পে। তারা মেগা প্রকল্প তৈরি করবে, মেগা প্রকল্পে মেগালুট করবে এবং দুর্নীতির মহোৎসব চালাবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কিট এখনো অনুমোদন দেয়নি সরকার। সব কিছুর পেছনে তাদের (সরকার) যে উদ্দেশ্যটা কাজ করেছে বা করছে সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। জনগণের সমস্যা সমাধান করার কোনো কাজ তারা কখনো করতে চায়নি এবং করবেও না।‘
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা একটা একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার। একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার কখনোই জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে না। গণতান্ত্রিক একটি সরকার, গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাই পারে এই ধরনের বিশ্বমহামারি মোকাবিলা করতে।’
দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। একই সঙ্গে এই রাষ্ট্র যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে তার জন্য আমরা সবাই কাজ করি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসা করবার জন্য যে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, সেই সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগটুকু তারা সৃষ্টি করতে পারেনি।’
‘আমরা কিন্তু এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, আমরা আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছি। পরিষ্কারভাবে বলেছি, বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের যারা চিকিৎসা করছেন তাদের জন্য বড় বড় হোটেলগুলোকে নিয়ে নেওয়া হোক, তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হোক’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্যানডেমিক মোকাবিলা করতে হলে সবার আগে দরকার সঠিক তথ্য। তারা সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। সঠিক তথ্য দেশের মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না। আক্রান্তের পরীক্ষা এতটুকু পর্যাপ্ত নয়। এত অপর্যাপ্ত যে সেটার সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে দেখা শতকরা ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ জনে ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। অধিক পরিমাণ পরীক্ষায় সরকারের কোনো সক্ষমতা নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংক্রমণ সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত যদি সরকার প্রথম থেকে আন্তরিক হতো এবং সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতো।’
দেশের অর্থনীতি ও জীবিকা সচল রাখতে বিএনপির দেওয়া প্যাকেজ প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্যাকেজ দিয়েছি যাতে করে অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং একই সঙ্গে জীবনকেও রক্ষা করা যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের, সরকার সেই বিষয়গুলোতে কোনো নজরই দেয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রথম দিকে তারা ত্রাণ শুরু করেছে, সেই ত্রাণে চুরি একটা মহোৎসব শুরু হয়েছে। কে কত চুরি করবে সেই কম্পিটিশন চলছিল। এমনকি বিছানার তলে, খাটের নিচে সয়াবিন তেলের আড়ৎ বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকার মধ্যে দেখেছি। অপর দিকে আমরা দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণাল এবং অধিদফতরের মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, সঙ্গে থাকব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ অদৃশ্য শত্রুকে মোকাবিলা করে যাচ্ছি এবং করে যাব।’
ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবদুস সেলিমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ অনেকে।