‘বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল শেখ হাসিনা’
২৩ জুন ২০২০ ১০:০৮
এস এম কামাল হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। জন্ম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার জোনাসুরে, ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি। কৈশোর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। স্কুল-কলেজ ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ বছর পূর্তি উপলক্ষে দলটির পথচলা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এই সাংগঠনিক সম্পাদক সম্প্রতি কথা বলেছেন সারাবাংলা’র সঙ্গে। আর এই কথোপকথনে সারাবাংলার পক্ষে অংশ নেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। দু’জনের কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
সারাবাংলা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ বছরের পথচলায় দলটির অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
এস এম কামাল হোসেন: আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পাকিস্তানের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, তাদের অন্যায়-অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে নানান অপশাসনের বিরুদ্ধতার ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন কারাগারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ এক অভিন্ন হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ছয় দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য আইয়ুব খান ১৯৫৭-৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মতো সাহসী নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধুর সততা এবং দেশপ্রেম, বঙ্গবন্ধুর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, বাংলার মানুষের প্রতি তার ভালোবাসাই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে তোলো এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে মানুষের রায় নিয়ে বাঙ্গালির স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। যা আওয়ামী লীগের সবথেকে বড় অর্জন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হাজার বছর ধরে বাঙালি যে স্বপ্ন দেখেছেন একদিন তারা স্বাধীন হবে, যে স্বপ্ন ক্ষুদিরাম, তিতুমীর, হাজী শরীয়তউল্লাহ, নেতাজী সুভাষ বসুসহ অনেকেই যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মানুষের সেই আরাধ্য স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক অভিন্ন। এই দুইটাকে বাদ দিয়ে চিন্তা করা যায় না। যারা চিন্তা করে তারা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিশ্বাস করে না।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে ঠিক যেভাবে পাকিস্তানের তথাকথিত লৌহমানব আইয়ুব খান ধ্বংস করতে চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছিল, ঠিক তেমনিভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে চেয়েছিল। সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর চলে হত্যা, গুম খুন-ধর্ষণ-নির্যাতন। সেই অন্ধকার যুগে বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে পিতার মত সাহসিকতা, সততা দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পিতার মতোই মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন এবং তার নেতৃত্বেই আজকে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুতনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি অন্ধকার দুর্বৃত্তদের বাংলাদেশ, সন্ত্রাসের বাংলাদেশ, জঙ্গিবাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছিল। সেই বাংলাদেশকে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে একটি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যে বাংলাদেশকে ষড়যন্ত্র করে বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের দরবারে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ। এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার।
আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তি চুক্তি হয়েছে, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি লাভ করেছে, আওয়ামী ক্ষমতায় এসেছিল বলেই সমুদ্র বিজয় হয়েছে, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছে। আজ আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছেন। এই ২০২১ সালের বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ করোনা মহামারির কারণে হয়তো একটু থমকে দাঁড়িয়েছে। আমার বিশ্বাস জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ঘুরে দাঁড়াবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘুরে দাঁড়াবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়।
আমি এই কথা বলতে চাই আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের উন্নয়ন, শেখ হাসিনা এক অভিন্ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন হয় ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, বাংলাদেশের মানুষ বাঁচার অধিকার পায়, শান্তিতে থাকে।
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতার ৭১ বছর পেরিয়ে এবার ৭২ বছরের পা দিচ্ছে। এই দীর্ঘ পথচলায় আপামর মানুষের আস্থা বিশ্বাসে সংগঠনে ‘হাইব্রিড’ নিয়ে তৃণমুলে নানামুখী টানাপোড়েনও সামাজিক মাধ্যমেও পরিলক্ষিত হয়। এটা কি পরপর টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে নেতাকর্মীদের এই ক্ষোভ, হতাশার সুর কি না- এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
এস এম কামাল হোসেন: ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবেই। ক্ষমতায় থাকলে সবার চাহিদা পূরণ করা যায় না। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্মীদের নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা নিয়ে কাজ করছেন। মানুষের অভাব-অনটন দূর করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষ যেন একটু শান্তিতে থাকে সেই ব্যবস্থাই তিনি গ্রহণ করেছেন। হ্যাঁ, যার ফলে ব্যক্তিগতভাবে কর্মীরা আমার প্রতি খুশি না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের দলের কর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। তারা মনে করে জননেত্রী শেখ হাসিনাই পারবে এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা না, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে শেখ হাসিনা হচ্ছে তাদের আল্লাহর রহমতে একমাত্র ভরসাস্থল।
শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের ক্রাইসিস, বাংলাদেশের সংকট মোকাবিলা করার কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি নেই। যা জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাই আমরা অহংকার করে বলতে পারি, আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। যিনি বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবেন। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন- এই লক্ষ্যেই জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করেন।
সারাবাংলা: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা থেকে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে? কোন প্রজন্ম দলের হাল ধরে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে…? কারণ ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ১ম ও ২য় প্রজন্মের নেতারা বয়সের ভারে চলে যাচ্ছেন, তাই আগামী দিনে দলের ভেতর কোনো নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হবে কি না?
এস এম কামাল হোসেন: হয়তো! আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব একটু সাময়িকভাবে থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু নেতৃত্বের শূন্যতা তো আওয়ামী লীগে নাই। আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর নেতাকর্মী রয়েছে। মূল হচ্ছে মূল ব্যক্তি যিনি; আমরা মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনা এসেছেন বলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রাণ পেয়েছিল, ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহতালা যতদিন বাঁচিয়ে রাখবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বে ততদিন ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
সারাবাংলা: করোনাভাইরাস সংকটের এই কালে এবার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন সীমিত পরিসরে পালন করবে, এবার দেশবাসীর কাছে আপনাদের অঙ্গীকার কি হবে?
এস এম কামাল হোসেন: এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ করা। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আল্লাহর রহমতে এই করোনা মহামারি মোকাবিলা করার মধ্য দিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ; জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ই হবে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের লক্ষ্য।
সারাবাংলা: আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারাবাংলার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
এস এম কামাল হোসেন: সারাবাংলা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।
আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের ৭১ বছর পূর্তি এস এম কামাল হোসেন চ্যালেঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন শেখ হাসিনা