Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারে দিনরাত যাদের ছুটে চলা


২৪ জুন ২০২০ ০৮:৫১

ঢাকা: দিন কিংবা রাত যখন-তখন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চলছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সাদা রঙের গাড়িটি। তার পেছনে ছুটছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি। দুটি গাড়ির চালকসহ সকলের আপাদমস্তক স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাদা পোশাকে ঢাকা। গাড়ি ছুটে যাচ্ছে কখনও কবরস্থানে, কখনও শ্মশানে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন বা দাহ করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এই গাড়ি। গাড়িটি ‘আল-রশীদ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের।

বিজ্ঞাপন

দেশে দিনকে দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার দাফন কিংবা সৎকারের দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছেন মৃতের স্বজনরা। সংক্রমণের পর মাকে হাসপাতালের করিডোরে সন্তানদের ফেলে রেখে যেতে যেমন দেখা গেছে, তেমনি বাবার মরদেহ হাসপাতালে রেখে সন্তান পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এমনই এক প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন করার পাশাপাশি অন্য ধর্মের অনুসারীদের দাহ করার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে আল-রশীদ ফাউন্ডেশন। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম এই দুঃসময়ে গড়ে তুলেছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য পরিবহন ও দাফনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আল-রশীদ ফাউন্ডেশন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স এবং রোগী পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত দুটি অ্যাম্বুলেন্স কিনেছেন নিজের টাকায়। তৈরি করেছেন ৩০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী দল। সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন।

বর্তমানে আগারগাঁও এলাকায় একটি অফিস নেওয়া হয়েছে। সেখানে এই স্বেচ্ছাসেবকরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে মরদেহ গ্রহণ করেন। মরদেহ গোসল ও জানাজার পর দাফন সম্পন্ন করে দোয়া পড়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। পাশাপাশি রীতি অনুযায়ী অন্য ধর্মের মানুষদের ক্ষেত্রেও সৎকারের সকল আয়োজন শেষ করেন। এরই মধ্যে এই সংগঠন শতাধিক মৃতদেহ দাফন ও দাহ করেছে।

বিজ্ঞাপন

অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আপাতত ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্রুতই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে দেশের যেকোনো জায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান এম শাহাদাত হোসেন তসলিম।

তিনি জানান, শুধু মুসলমানদের ধর্মের মৃতদেহই নয়, তারা যেকোনো ধর্মালম্বীর মৃতদেহের সৎকার করছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হচ্ছে তাদের দাফন করা নিয়ে সমস্যার বিষয়টি নজরে আসে আমার। করোনা আক্রান্তের শঙ্কায় স্বজনদের ফেলে চলে যাচ্ছে অনেকে। হাসপাতালে না নিতে পেরে গাড়িতে কিংবা বাড়িতেই মারা যাচ্ছেন কেউ কেউ। এসব ঘটনা যখন টেলিভিশন কিংবা সংবাদপত্রে দেখি তখন ভীষণ মন খারাপ লাগে। তখনই ঠিক করি আমি তাদের জন্য কিছু করতে চাই। সম্প্রতি করোনায় মারা যাওয়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ’র সঙ্গে আলাপ করলে তিনি উৎসাহ দেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেতে সহযোগিতা করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি কাজটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো ঝুঁকি নিতেই হবে। যিনি মারা যাচ্ছেন তিনি কারও বাবা, কারও মা, কারও ভাই-বোন কিংবা সন্তান। তাদের এভাবে মরে পরে থাকতে দেখা যায় না।’

সংগঠনের ভবিষ্যৎ এবং করোনা পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন কি না?- জানতে চাইলে তসলিম বলেন, ‘আমি আল-রশীদ ফাউন্ডেশনের কাজ সবসময় করতে চাই। পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশে দরিদ্রদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রয়োজনীয় সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।’

আল-রশিদ ফাউন্ডেশন করোনাভাইরাস করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু করোনায় মৃত্যুর পর দাফন কোভিড-১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর