ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে আ.লীগ নেতা ফয়সাল ইকবালকে গ্রেফতারের দাবি
২৩ জুন ২০২০ ২৩:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের একটি মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আলোচিত নেতা ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। তাদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সরব নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি’র ‘লাশ ফেলা’র হুমকি দিয়েছেন ফয়সাল ইকবাল, যিনি বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক পদেও আছেন।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় চট্টগ্রামে গড়ে তোলা একটি আইসোলেশন সেন্টারের পরিচালক মো. সাজ্জাত হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের সময় রনি’র লাশ ফেলার হুমকি দিয়েছেন মর্মে সোমবার চট্টগ্রামের কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে সংবাদ পরিবেশিত হয়। মঙ্গলবার কয়েকটি গণমাধ্যমেও এই খবর আসে।
সোমবার কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে পরিবেশিত সংবাদকে ভিত্তি ধরে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ছাত্রলীগ পরিবারের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত আসলে সমুচিত জবাব’ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে। নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এরপর মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দীন মামুন ও আনোয়ার হোসেন পলাশের সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা গাজী জাফর উল্লাহ, নুরুল আনোয়ার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান।
এতে বক্তারা বলেন, ‘করোনা মহামারিতে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নুরুল আজিম রনিসহ ছাত্রনেতারা একটি আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সিন্ডিকেটের প্রধান বিএমএ নেতা ফয়সাল ইকবাল তাকে খুনের চক্রান্ত করছেন। অতীতে ফয়সাল ইকবালদের মতো মাফিয়া চক্রের হাতে অনেক ছাত্রনেতা খুন হয়েছেন। চট্টগ্রামের মাটিতে আমরা আর কোনো ছাত্রনেতার রক্ত দেখতে চাই না। ফয়সাল ইকবালকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় তাকে রাজপথে প্রতিরোধ করবে ছাত্রসমাজ।’
‘হুমকি পাওয়া’ নুরুল আজিম রনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমালোচনায় সবসময় সরব রনি। আর ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
‘লাশ ফেলার হুমকির’ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রনি। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জিম্মি করেছেন ফয়সাল ইকবাল। এটা চট্টগ্রামের মানুষ সবাই জানেন। আমি গত ৪ জুন এক কর্মসূচিতে বিনা চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর জন্য ফয়সাল ইকবালকে দায়ী করে তাকে গ্রেফতারের দাবি করেছিলাম। এজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আমার লাশ ফেলার ঘোষণা দিয়েছেন। উনার হুমকির বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ, হত্যার হুমকি দেওয়ার পরও তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের পদে থাকতে পারেন কি না, সেটা আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন।’
তবে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী মোবাইলে কথোপকথনের যে রেকর্ডের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে সেটি তার নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেকর্ডের ৯ সেকেন্ড ও ৩০ সেকেন্ডে দুই বার বলা হয়েছে— ঠিক আছে মিনহাজ ভাই। ফয়সাল ইকবালের সঙ্গে কথা বলার সময় মিনহাজ ভাই বলবেন কেন? রনি দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে আমার নামে আজেবাজে অনেক কথা লিখছে। এর প্রতিটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হওয়ার মতো। আমি তো সেগুলোকে পাত্তাও দিইনি। তাহলে আজ হঠাৎ খুনের হুমকি দেবো কেন? আমি পেশাজীবী রাজনীতি করি, বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক, এরপর মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। রনির লেভেল আর আমার লেভেল তো এক না। সে তো আমার প্রতিদ্বন্দ্বীও না। তাকে আমি হুমকি দেবো কেন? এসব বিষয় যদি বিবেচনায় নেন, তাহলে বুঝতে পারবেন, তারা নিজেরাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিট করে একটি ভুয়া রেকর্ড তৈরি করেছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য।’
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই আলোচনায় আসতে শুরু করেন বিএমএ নেতা ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা না দেওয়ার নেপথ্যে এই বিএমএ নেতার মদতের অভিযোগ ওঠে জোরেশোরে। গত ৩০ মে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মনিটরিংয়ে স্থানীয় প্রশাসন গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিমের সদস্য করা হয়েছিল ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে। বিতর্কের মুখে তাকে পরে বাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে কিছুদিন নিশ্চুপ থেকে ‘লাশ ফেলার হুমকিতে’ আবারও আলোচনায় এলেন এই চিকিৎসক নেতা।
চট্টগ্রাম বিএমএ চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বিএমএ নেতা মানববন্ধন কর্মসূচি