অরক্ষিত করোনা ওয়ার্ড, পুরো হাসপাতালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
২৪ জুন ২০২০ ০৯:৫৯
বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে বলতে গেলে অরক্ষিত। হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না করা ও নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরাই অবাদে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে দোকান থেকে ওষুধ ও খাবার কিনে আনছেন। এতে পুরো হাসপাতালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কয়েক রোগীর সঙ্গে কথা হলে হলে তারা হাসপাতালের বাইরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ সময় তারা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও হাসপাতালের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এমনকি বাইরে থেকে খাবার ও ওষুধ এনে দেওয়ার মতো হাসপাতালের কাউকে পাওয়া যায় না। আবার অনেকের স্বজন কাছে না থাকায় বাধ্য হয়ে তাকে বাইরে যেতে হচ্ছে।
গত ২১ জুন বরিশালের এক ব্যবসায়ী পরিবার ঢাকায় নমুনা পরীক্ষা করায়। এতে ওই পরিবারের স্ত্রী-পুত্রসহ চারজনের করোনা পজিটিভ আসে। এরপর ওইদিন রাতে বরিশালে পৌঁছেই তারা শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরিবারের অপর সদস্য একমাত্র মেয়ের করোনা পজিটিভ হলেও কোনো উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার মেয়ের কোনো উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা একেবারে অরক্ষিত। এখানে এসে চরম সমস্যায় পড়েছি। বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে হাসপাতালে আসতাম না। হাসপাতালের খাবার নিম্নমানের। খাওয়ার উপযোগী না। এমনকি দেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় ওষুধ। হাসপাতালের কোনো লোক নেই যাদের বাহিরে পাঠিয়ে খাবার ও ওষুধ আনা যায়। তাই বাধ্য হয়েই আমার করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাহিরে পাঠিয়ে খাবার এবং ওষুধ আনানো হয়েছে।’
এদিকে হাসপাতালের সামনের ব্যবসায়ীরা বলেন, দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, এটা বোঝা অসম্ভব। আক্রান্ত কেউ দোকানে এলে তার সংস্পর্শে অনেকে সংক্রমিত হতে পারেন। রোগীরা যাতে ওয়ার্ডের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়ানো উচিত।
হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. কালাম বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীরা ওয়ার্ডের বাইরে ও বিভিন্ন দোকানে অবাধে চলাফেরা করছে। তারা যেভাবে ওষুধ ও খাবার কিনতে বিভিন্ন দোকানে আসছে, তাতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, ‘করোনা ওয়ার্ডে রোগী পাহারা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। সেজন্য এমনটা ঘটে থাকতে পারে। করোনা ওয়ার্ড পাহারা দেওয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের খাবার ও ওষুধ এনে দেওয়ার লোকের প্রয়োজন হলে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করবে। সেখানে পুলিশ রোগী পাহারা দেবে এমন কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেবাচিম কর্তৃপক্ষ তাদের লোক দিয়ে করোনা ওয়ার্ড পাহারা দিতে পারে। প্রয়োজনে করোনা ওয়ার্ডের গেট তালা দিয়ে রাখতে পারে। হাসপাতালের রোগী পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয়।’