Friday 04 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বগুড়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নমুনা জট, ভিটিএম সংকটও চরমে


২৪ জুন ২০২০ ১২:৪৬
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বগুড়া: আবদুল কাইয়ুম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। জ্বর, সর্দি, কাশি ও বমি নিয়ে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে গিয়েছেন শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে। তার শরীর এতই দুর্বল যে, তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। কোনোরকমে তিনি সেদিন নমুনা দিয়ে চলে আসেন। ওই নমুনা দেওয়ার চৌদ্দ দিন পর তিনি প্রায় সুস্থ। তবে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না সেই ফল মঙ্গলবার (২৩ জুন) পর্যন্ত পাননি। এরকম অবস্থা অনেকের।

বগুড়ায় করোনার সংক্রমণের সঙ্গে নমুনা পরীক্ষারও বেসামাল অবস্থা। বেশির ভাগ পরীক্ষার রেজাল্ট সাতদিনের আগে হচ্ছে না (বেসরকারি ল্যাব ছাড়া)। এতে নমুনা দেওয়া লোকজন ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তাসহ মানসিক চাপে পড়ছেন। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে অস্বাভাবিক বিলম্ব সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে। এতে বেড়েই চলছে নমুনা জট।

বিজ্ঞাপন

শজিমেক কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার (২২ জুন) পর্যন্ত পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা নমুনার সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। যেখানে প্রতিদিন তাদের আরটিপিসির ল্যাবে পরীক্ষার সক্ষমতা ১৮৮। আর প্রতিদিন নতুন করে নমুনা জড়ো হচ্ছে তিন শতাধিক। শুধু তাই নয়, এখন স্যাম্পল সংগ্রহ কিট ভিটিএম’র ও সোয়াপ স্টিকের সংকট থাকায় নমুনা সংগ্রহেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই ল্যাবে আরেকটি নতুন পিসিআর মেশিন বসানো না গেলে করোনার নমুনা পরীক্ষার জট ও লোকজনের ভোগান্তি কমবে না।

বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, ১২টি উপজেলা থেকে ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ হয় সাড়ে পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ নমুনা। আর তাদের পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন পরীক্ষার সক্ষমতা ১৮৮। ফলে প্রতিদিন সাড়ে ৩ শ’র বেশি নমুনার জট তৈরি হচ্ছে। জট হওয়া নমুনা ৪/৫ দিন পর পর ঢাকায় ন্যাশন্যাল ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠান হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষা শেষে ফলাফল আসতে আসতে আরও ৪/৫ দিন লাগছে। এরপর সেসব ফলাফল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ঘোষণা করছে। এজন্য পরীক্ষার ফলাফল পেতে রোগীদের বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি জানান, বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের আরটি পিসিআর ল্যাবে আরেকটি পিসিআর মেশিন জরুরি। এটি হলে আগেরটির ব্যাকআপ হিসাবেও যেমন কাজ করবে, সেইসঙ্গে বর্তমান লোকবল দিয়েই আরেকটি পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন আরও ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

তবে ডা. রেজাউল আলম জুয়েল করোনা পরীক্ষার কিট সংকটের কথা স্বীকার করেননি। তিনি জানান, নমুনা সংগ্রহের ভিটিএম টিউবের (স্টিকের মাধ্যমে নমুনা নেওয়ার পর পরীক্ষার জন্য রাখা টিউব) ক্ষেত্রে তারা জটিলতায় রয়েছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে করোনা পরীক্ষা কিটের সঙ্গে ভিটিএম বা টিউব সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে বগুড়ায় সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় লোকজনের নমুনা দেওয়ার পরিমাণও বেড়ে গেছে। এতে স্যাম্পল সংগ্রহ কিট বা ভিটিএম এবং সোয়াব স্টিকের সংকট দেখা দেয়। এক্ষত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ বিকল্পভাবে স্যাম্পল কিট সংগ্রহ করে সরবরাহ করলেও জটিলতা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিকল্প উপায়ে সংগ্রহ করা টিউবে নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে নমুনা সংগ্রহ তত্ত্বাবধান করা একাধিক কর্মকতা জানিয়েছেন। বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু নমুনা সংগ্রহের ভিটিএম ও সোয়াব স্টিকের সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, ‘বিকল্প উপায়ে সংগ্রহীত টিউবে নমুনা সংগ্রহ করতে নরমাল স্যালাইন ব্যবহার করা হলেও দ্রুত তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে। এতে জটিলতা থাকলেও নমুনার মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’

বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপতালের সহকারী পরিচালক ডা. ওয়াদুদ জানান, নমুনা জটের কারণে তারা বেশি করে নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন না। শুধু নির্ধারিত সংখ্যার রোগীর নমুনা নিতে পারছেন। তিনি নমুনা সংগ্রহের ভিটিএম’র সংকট থাকার কথা জানিয়ে বলেন, বিকল্প টিউবে তারা নমুনা সংগ্রহ করছেন।

এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জানান, বিকল্প টিউবে সংগ্রহ করা নমুনা ল্যাবে আবার নতুনভাবে সংরক্ষণ করতে জটিলতা ও সময় লাগছে। তবে দ্রুতই অরজিনাল ভিটিএম সরবরাহ স্বাভাবিক হলে এই জটিলতা কেটে যাবে বলে তিনি আশা করেন।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান নমুনা সংগ্রহের ভিটিএম সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে এই টিউব সংগ্রহ করে নরমাল স্যালাইনে নমুনা রাখা হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে এই সংকট চললেও দ্রুতই সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

টপ নিউজ নমুনা জট বগুড়া ভিটিএম সংকট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর