কঠোর লকডাউনে সন্তুষ্ট পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দারা
২৪ জুন ২০২০ ১৩:৫১
ঢাকা: ‘যেদিন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের এলাকায় লকডাউন হবে, সেদিন শুধু আমি না, এলাকার কম-বেশি সব বাসিন্দার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। শুধু আমাদের এলাকাই কেন বেছে নেওয়া হলো এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের। সেদিন আমিও বিরক্ত হয়েছিলাম। তবে এখন আমি শতভাগ সন্তুষ্ট। এত কড়াকড়ি লকডাউন আমরা কেউ কল্পনাও করিনি’।
এভাবেই সারাবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন এলাকার বাসিন্দা জাওয়াদ ইবনে মাছুম। গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২ টা থেকে ওই এলাকা পরীক্ষামূলক লকডাউন ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এর আগে এলাকায় লকডাউন ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। সেই সঙ্গে উপহাসও করেছিল কেউ কেউ। তাদেরই একজন মাসুম, পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
মাছুম বলেন, ‘শুরুতে আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি। এপ্রিল-মে প্রথম দুমাস দেশে যেভাবে লকডাউন (অঘোষিত) চলেছিল, তাতে কে না বিরক্ত হবে? আমরাও ভেবেছিলাম লকডাউন মানে আগের মতোই হবে। এমন পরিস্থিতিতে অন্যদের মতো আমিও বিরক্ত হয়েছিলাম।’
মাছুমের স্ত্রী মরিয়ম বিলকিস বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণে এনে সামলে নিতে পেরেছে প্রশাসন। আমরা প্রতিদিন এলাকার করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্তদের খবরাখবর নেই। সেই হিসেবে ইদানিং দুটোরই সংখ্যা কমেছে। প্রথম দিকে হয়তো একটু কষ্ট হয়েছে। প্রয়োজনে বের হতে পারিনি। কিন্তু কষ্টটা এখন স্বার্থক। কড়াকড়ি লকডাউনের কারণে আমাদের এলাকায় এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমছে।’
একই কথা বললেন অপর এক বাসিন্দা ইসমত আলী। তিনি বলেন, ‘সব মানুষই কষ্টের মাঝে সুফল খোঁজে। আমরাও তো তাই। প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও নিজেদের স্বার্থে আমরা কষ্ট সহ্য করেছি।’ তবে প্রশাসনের অবশ্যই এব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম এক দুদিন বুঝে উঠতে সময় লেগেছিল। কিন্তু ‘লকডাউন কার্যকরে কোন ছাড় নয়’— দায়িত্বপালনকারী সকল সদস্যকে এ নির্দেশনা দেয়া আছে। আশা করছি সুফল মিলবে। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে।’
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর থেকে পূর্ব রাজাবাজারে ১০-১৬ জুন অর্থাৎ প্রথম সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৩৭ জনের। তাদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিল ৩৩ জন। যা মোট ফলাফলের ২৫.১৯ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী ৫ দিন অর্থাৎ ১৭-২১ জুন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৪ জনের। তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ জন। যা মোট ফলাফলের ৯.৪ শতাংশ। আর সর্বমোট পরীক্ষা করা হয়েছে ২০৫ জনের। পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েছে ৪০ জনের। যা মোট ফলাফলের ১৯.৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লকডাউনের সমন্বয়কারী ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে: কর্ণেল মো: গোলাম মোস্তফা সারওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২১ জুন পর্যন্ত আমরা আইইডিসিআরের কাছ থেকে যে পরিসংখ্যান পেয়েছি সেই অনুযায়ী বলতে পারি— লকডাউন শতভাগ কার্যকর হতে যাচ্ছে। কারণ আমাদের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ জন। আর দ্বিতীয় সপ্তাহের ৫ দিনে ৭ জন। পরবর্তী দুদিনে যদি আরও তিনজন আক্রান্ত হয় তবুও সর্বোচ্চ ১০ জন হবে। এতেই বোঝা যাচ্ছে আমরা আক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আমরা শুধুমাত্র লকডাউন কার্যকর দেখানোর জন্য আক্রান্তের সংখ্যা কম করে দেখাতে চাই। এটা নিছক ভুল ধারণা। যারা এমনটা ভাবছেন তাদেরকে বলছি, এ লকডাউনের মাধ্যমে আমরা কোন পুরস্কার পাওয়ার আশা করছি না। বরং এটা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, লকডাউন এলাকায় যেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে বাইরের এলাকাগুলোতে সেভাবে পরীক্ষা হচ্ছে না। পূর্ব রাজাবাজারে কারো নরমাল উপসর্গ থাকলেই পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ তাদের জন্য একটি পরীক্ষার বুথ নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। তাই আমাদের চেষ্টা একটাই, আক্রান্তদের শনাক্ত করা এবং আলাদা করা। সেই সঙ্গে আক্রান্তরা যেন বাইরে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা। বের হতে না পারার কারণে বাসিন্দাদের সমস্যাগুলো শিথিল করার চেষ্টা করছি আমরা।’
লকডাউনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুর দিকে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। যদিও প্রতিনিয়ত এ চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। তবে আশার কথা হল, লকডাউন কার্যকরে আমরা এখন পর্যন্ত সফল। শুরুর দিকে আর বর্তমানে আক্রান্ত বিবেচনায় আমরা একে সফল দাবি করছি। তবে আরও ৭ দিন সময় বাড়িয়েছি। আমরা দেখবো এ সাতদিনে পরিস্থিতি কী হয়। যদি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামে তবে লকডাউন তুলে নেব। আর যদি আক্রান্ত পাওয়া যায় তবে হয়তো ২৮ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।’