Sunday 15 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতন মামলায় ৭ নির্দেশনাসহ হাইকোর্টের রায়


২৪ জুন ২০২০ ১৩:১২
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। মানুষের অধিকার রক্ষা ও মানুষকে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয়া দিয়ছে বলে রায়ে বলা হয়েছে। বুধবার (২৪ জুন) রায় প্রকাশের বিষয়টি জানিয়েছেন রিটকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।

তিনি জানান, ৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে কমিশনকে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার নির্যাতনের শুনানি করে ক্ষতিপূরণ বা যেকোনো সুপারিশ করতে মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মানবাধিকার কমিশন দায়িত্ব নিয়ে জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেছেন। রায়ে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্নক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে কমিশন তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ/সচেতন নয়। এছাড়া দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। ‘মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে।’

রায়ে মানবাধিকার কমিশনের প্রতি দেওয়া আদালতের ৭ নির্দেশনা

১. খাদিজা নির্যাতন মামলার অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় এবং প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয়া দিয়ছে।

২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এই আদেশগুলো কমিশনের আদেশ নাকি কোনো সদস্যের আদেশ। কোনো সদস্য এরূপ আদেশ আদৌ দিতে পারে কি না। মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরণের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।

৩. কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে যে, কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যবৃন্দের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং আশের নকল কপি যেন ভুক্তভোগী পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. কমিশন যে খসড়া বিধিমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলার সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।

৫. আইনের ১৬ এবং ১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

৬. কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ পাত/বিবেচনা না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট আবেদন করার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, ইহা অবশ্যই ন্যায়-বিচারের সকল নীতি মেনে চলতে বাধ্য। অত্র রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায়, তা করতে কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যদি শুনানিতে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের ১৯ নম্বর ধারার বিধান মতে খাজিদা বরাবর যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ কমিশন করবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেয়। কিন্তু এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটের ওই রিটের শুনানি শেষে রায় হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো।

খাদিজা নির্যাতন টপ নিউজ পূর্ণাঙ্গ রায় মামলা হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর