চলে গেলেন ‘মানবিক ডাক্তার’ সামিরুল, চট্টগ্রামে শোকের ছায়া
২৪ জুন ২০২০ ১৬:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভালো এবং মানবিক আচরণের জন্য চট্টগ্রামের আপামর মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন চিকিৎসক সামিরুল ইসলাম। যখন তিনি নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড ১৯) আক্রান্ত হন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উৎকণ্ঠা জানিয়ে সরব হন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে স্বস্তিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর আকুতিকে উপেক্ষা করে মানবিক এ চিকিৎসক চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বুধবার (২৪ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সামিরুল ইসলাম মারা গেছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. মো. নুরুন নবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামিরুল সাহেবের করোনা নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছিল। কিন্তু করোনায় ওনার ফুসফুসে যে সংক্রমণটা হয়েছিল, সেটি থেকে উনি রিকভার হতে পারেননি। এ জন্য উনাকে কন্টিনিউয়াসলি হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। আজ (বুধবার) দুপুর ২টায় আইসিইউতে তিনি মারা গেছেন।’
সমিরুলের বন্ধু স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সামিরুল দুই সপ্তাহ চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। ২৯ মে তাকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়।
কিছুটা সুস্থ হলে গত ১৩ জুন তাকে চমেক থেকে বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালের কেবিনে নেওয়া হয়। এর মধ্যে তার করোনা নেগেটিভ প্রতিবেদন আসে। কিন্তু এরপর হঠাৎ করে বুধবার সকালে তার ফুসফুসের জটিলতা দেখা দেয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশান কমে যায়। এরপর লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।
সামিরুল ইসলামের স্ত্রী চমেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনা ইসলাম এবং দুই সন্তানও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বাসায় চিকিৎসা নিয়ে তারা এখন সুস্থ আছেন।
চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পরও তিনি চিকিৎসা বন্ধ করেননি। নিয়মিত হাসপাতালে গেছেন এবং রোগীদের সেবা দিয়েছেন। রোগীদের অস্ত্রোপচারেও অংশ নিয়েছেন।
মৃত্যুর পর মানবিক চিকিৎসক সামিরুলের জন্য স্বাভাবিকভাবেই চট্টগ্রামে আবারও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সামিরুলের জন্য আবেগের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন অনেকেই।
কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন অপরিচিত লোক কী করে প্রথম পরিচয়ে আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে ডা. সমিরুলকে দেখে বুঝেছিলাম! পরে আমার পরিচিত যারাই তার কাছে গেছেন, ফিরে এসে জানিয়েছেন ফিস তো নেনইনি, উপরন্তু আমার কথা বলেছেন তাদের কাছে। কেন? কী কারণে আমাদের এই সৌহার্দ্য জন্মেছিল জানি না। আজ কিছুতেই অশ্রু সংবরণ করতে পারছি না। প্রিয় মানুষগুলো এভাবে হারিয়ে যাবে !’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম লিখেছেন, ‘এই ফ্রন্টলাইনারকে আর বাঁচানো গেলো না! অসময়ে চলে গেল চট্টগ্রামের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সমিরুল ইসলাম বাবু। আর কত মৃত্যুতে মিছিল থামবে?’
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার লিখেছেন, ‘করোনার ভয়াল থাবায় চলেই গেলেন না ফেরার দেশে মানবিক মানুষ দেশের খ্যাতিমান অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সামিরুল ইসলাম। সামির ভাই, প্রয়োজনে অবেলায় অসময়ে আর কোনোদিন ফোন করা হবে না, সিরিয়াল ব্রেকের আবদার আর ওটি চার্জ কমানোর অনুরোধ আর করা হবে না ! হাসিমুখে রোগীদের সহযোগিতার আবদার পূরণে আপনি অদ্বিতীয়ই থেকে গেলেন অন্তত আমার কাছে।’