Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সাময়িক মুক্তির’ ৯০ দিন, শর্তের ব্যাপারে সচেতন খালেদা!


২৪ জুন ২০২০ ২১:৪৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে পাওয়া ‘সাময়িক মুক্তি’র ৯০ দিন পার করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। করোনা মহামারির উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান তিনি। মুক্তির পর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। রয়েছেন শর্তের ব্যাপারে শতভাগ সচেতন!

মুক্তির আগের দিন ২৪ মার্চ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা-১-এ খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং এই সময় দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আর মুক্তির দিন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, যেসব শর্তে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভাঙলেই তার মুক্তির আদেশ বাতিল হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং বিদেশে না যাওয়া’র শর্ত পুরোপুরি মেনেই ‘সাময়িক মুক্তির’ অর্ধেক সময় পার করেছেন খালেদা জিয়া। ২৫ মার্চ মুক্তির পর প্রথম চৌদ্দ দিন কোয়ারেনটাইনে কেটেছে তার। এ সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছাড়া তার বাসায় কেউ ঢুকতে পারেননি। মুক্তির দেড় মাস পর গত ১১ মে প্রথমবারের মতো দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে পাঠান বেগম খালেদা জিয়া।

এরপর ২৫ মে ইদুল ফিতরের দিন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ‘ফিরোজা’য় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। সর্বশেষ গত ১৩ জুন রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফিরোজা’য় ডেকে নেন খালেদা জিয়া। এদিন দেশ এবং দলের সার্বিক পরিস্থতি সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মুক্তির আগে আইনমন্ত্রী যে দু’টি প্রধান শর্তের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সে দু’টি শর্ত শতভাগ পালনে বদ্ধপরিকর বেগম খালেদা জিয়া। সে কারণেই হোম কোয়ারেনটাইন পিরিয়ড শেষ হলেও বাসার মাত্র থেকে কয়েকশ’ গজ দূরে ইউনাইটেড হাসপাতালে যাওয়ার উদ্যোগ নেননি তিনি। অথচ কারাবন্দি থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বার বার এ হাসপাতালটির কথাই বলেছিলেন খালেদা জিয়া এবং তার স্বজনরা।

কারামুক্তির দ্বিতীয় শর্ত ছিল- ‘বিদেশে না যাওয়া’ বা দেশত্যাগ না করা। সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে- চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। অথচ কারামুক্তির দিনই অ্যাটর্নি জেনারেল পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন ‘শর্ত ভাঙলেই মুক্তি বাতিল!’

দলীয় সূত্রমতে, বিদেশ যাওয়ার ‘গুঞ্জনে’ বিব্রত হন খোদ বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সম্প্রতি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়- খালেদা জিয়া এবং দলের যেকোনো বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে বলবেন কেবল মাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের অন্য কেউ এ ব্যাপারে মিডিয়াতে কোনো বক্তব্য দেবে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলের বক্তব্য তুলে ধরবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সব বিষয়ে তিনিই কথা বলবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে আইনমন্ত্রী যে দু’টি শর্তের কথা বলেছিলেন, তার বাইরেও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। ওই শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো— ‘সাময়িক মুক্তি’র সময়কালে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না খালেদা জিয়া; দলের হয়ে কোনো বক্তব্য বা স্টেটমেন্ট দিতে পারবেন না, সাংগঠনিক কোনো তৎপরতায় যুক্ত হতে পারবেন না, গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না, নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন না।

দলীয় সূত্রমতে, এসব শর্ত কেবল মাত্র খালেদা জিয়ার পরিবারকেই লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে এবং খালেদা জিয়াকে তাদের জিম্মায়ই ছাড়া হয়েছে। কোনো শর্ত ভঙ্গ হলে পরিবারের কাছেই কৌফিয়ত তলব করা হবে। তাই শর্তগুলো পালনের ব্যাপারে খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার খুবই সচেতন।

সে কারণেই মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ জানানো হলেও সেটাকে আমলে নেননি খালেদা জিয়া। কেবলমাত্র ঈদের দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে করোনা দুর্যোগে দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান সাময়িক সময়ের জন্য মুক্ত খালেদা জিয়া। আর ওইদিন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেটাকে নিকট প্রতিবেশির সঙ্গে স্রেফ ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ বিনিময় হিসেবেই নিয়েছেন তিনি। থেকেছেন শর্তের ব্যাপারে শতভাগ সচেতন।

শর্তগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন— আইনমন্ত্রীর মুখ থেকে আমরা এ দুটি শর্তের কথাই শুনেছি। শর্তের লিখিত কপিতে কী আছে, সেটা আমি দেখিনি। কিছু বলতেও পারব না।’

খালেদা জিয়া বিএনপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর