Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ মাসে এসএমই খাতে ক্ষতি ৯২ হাজার কোটি টাকা: বিআইডিএস


২৪ জুন ২০২০ ২২:১৩

ঢাকা: করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত দুই মাসে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও তারা সবাই এই সুবিধা নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্য প্রায় ৫ শতাংশ করে বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠানটি। আরও বলছে, সাধারণ ছুটির কারণে কর্মহীন পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ জুন) বিআইডিএস আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে উপস্থাপন করা গবেষণাপত্রে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারশেসন-২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কভিড-কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ শীর্ষক এ সেমিনারে চারটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য ইমিডিয়েট ইমপ্যাক্ট অ্যন্ড কোপিং স্ট্র্যাটেজিস’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার কারণে দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটি থাকায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে এসএমই খাত।  দুই মাসেই এ খাতে ক্ষতি হয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। লকডাউনে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ায়, অবিক্রিত পণ্যের স্তূপ ও উৎপাদিত পণ্যের দাম আটকে থাকায় ৪১ শতাংশের বেশি এসএমই প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত বছরের শেষে অবিক্রিত মাল ছিল ৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকার, চলতে বছরে তা ১৯ লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হতে পারে। প্রতি প্রতিষ্ঠানের বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

স্টিমুলাস প্যাকেজ অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। প্রতি মাসে এ খাত থেকে আয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। গত দুই মাসে এ খাতে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এই সুবিধা সবাই নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সেমিনারে ‘শর্ট টার্ম ইফেক্টস অব ইকোনোমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রোটেকশন’ শীর্ষক গবেষণাটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে যাবে। চলতি বছর শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ হতে পারে, যা বছরের শুরুতে ছিল ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া অতিদরিদ্র থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল ১০ দমমিক ১ শতাংশ।

‘ফাইন্ডিংস ফ্রম এ লার্জ অনলাইন সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার আগে মোট পরিবারের মধ্যে কর্মহীন পরিবার ছিল ১৭ শতাংশ। করোনার কারণে কর্মহীন পরিবার নতুন করে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে এখন চাকরিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩০ শতাংশ।

সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, চাইলেও বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় লকডাউন চালু রাখা সম্ভব নয়। এজন্য সীমিত পরিসরে অনেক কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সঠিক। কেননা কিছু মৃত্যু হবে— এটি অবধারিত। ইউরোপ-আমেরিবকার অনেক দেশ করোনায় ব্যাপক মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। কিন্তু আমরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছি। আশা করছি, দেশে মৃত্যু আরও কমবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হোক বা যা কিছু আবিষ্কার হোক, সেগুলোর ওপর সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি। ডব্লিউএইচও’র মাধ্যমে এটি হলে ভালো হবে। এজন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। করোনা মোকাবিলায় প্রথম দিকে কিছুটা প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও এখন সেটি আর নেই। সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য নিরসনে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল মিলবে আশা করা যায়। এখানে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। আমি বলব, আমি যখন ঘোড়ার পিঠে আছি, তখন ঝাঁকুনি তো একটু লাগবেই। ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিত গবেষণা হলে সরকার সহায়তা দেবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক ছিলেন যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এস আর ওসমানী, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন।

করোনাভাইরাস করোনার প্রভাব গবেষণা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস সাধারণ ছুটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর