অনলাইন শিক্ষায় শুরুতেই প্রয়োজন শিক্ষার্থীবান্ধব পরিকল্পনা
২৪ জুন ২০২০ ২৩:১৯
ঢাকা: করোনাকালে অনলাইন শিক্ষাকে সার্থক করতে দীর্ঘমেয়াদি ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিকল্পনা প্রণয়নে জোর দিয়েছেন তিন পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তারা বলছেন, মহামারি চলে যাওয়ার পরও অনলাইনে যেন ক্লাস চালিয়ে নেওয়া যায়, তেমন পরিকল্পনা করতে হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, এই পরিকল্পনায় যেন সব শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং তাদের সহজে অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলা আয়োজিত ‘সারাবাংলা ফোকাস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তারা এসব কথা বলেন। সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ‘অনলাইনে পড়াশোনা সমস্যা ও সম্ভাবনা’।
সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট এম এ কে জিলানীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জিয়া ওয়াদুদ, আমেরিকার নিউইয়র্কর ক্লার্কসন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আবুল বিএম বাকি ও টেক্সাস এএন্ডএম ইউনিভার্সিটি কিংসভেল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আদনান রাজীব।
জিয়া ওয়াদুদ বলেন, লিডস বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে অভ্যস্ত। মহামারির এই সময়ে সেই অভিজ্ঞতা খুব সহায়তা করেছে। যেসব ক্লাস অনলাইনে নেওয়া সম্ভব নয়, আমরা আপাতত সেগুলো স্থগিত রেখেছি। এর বাইরে সবই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে।
তিনি আরও বলেন, মহামারির শুরুতে লিডস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাদের ল্যাপটপ নেই, তাদেরকে ল্যাপটপ ধার দিয়েছে। একটি ছাত্রও যে অসুবিধায় না পড়ে, আমরা সেদিকে সবার আগে দৃষ্টি দিয়েছি। প্রক্রিয়াটিকে সহজ করতে প্রথম সাত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো আইটি সিস্টেমকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
আবুল বি এম বাকি বলেন, মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী অনলাইন ক্লাসগুলো পরিচালনা করেছি। একটি কমন মেইলের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। এতে করে ক্লাসের পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে গেছে।
আদনান রাজীব বলেন, অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করার মতো রিসোর্স আমাদের ছিল। কিন্তু হুট করে এই আয়োজন করতে গিয়ে শুরুতে আমাদেরও ধাক্কা খেতে হয়েছে। অনলাইন ক্লাস মানে তো কেবল ইন্টারনেট বা ল্যাপটপ থাকা নয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের একটা বিষয়ও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন বাড়িতে বসে ক্লাস করেন, তখন তিনি কিন্তু ভিন্ন একজন মানুষ। আর্থসামাজিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতা তার ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। ক্লাস কিংবা পরীক্ষার আগে আমাদেরকে এ বিষয়টিতেও দৃষ্টি দিতে হয়। আমাদের অনলাইন পাঠ্যসূচিও আমরা এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে সাজিয়েছি।
বাংলাদেশের অনলাইন ক্লাস পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জিয়া ওয়াদুদ বলেন, পশ্চিমের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অনেক পার্থক্য রয়েছে। জুমে ক্লাস নেওয়া মানেই কিন্তু অনলাইন ক্লাস নয়। এই দায়িত্ব শিক্ষকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, কর্তৃপক্ষকে এর কথা ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশের সব প্রান্তে প্রয়োজনের ইন্টারনেট আছে কি না, দাম সহজলভ্য কি না— এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
বি এম বাকি বলেন, শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের খরচ দেওয়া যেতে পারে। ক্লাস আয়োজনের জন্য ক্ষেত্রে জুনিয়র শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষক মিলে কাজ করলে ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে জুনিয়র শিক্ষকরা প্রযুক্তিগত বিষয়ে সহযোগিতা করবেন, সিনিয়ররা নেবেন ক্লাস।
আদনান রাজিব বলেন, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি— দুই ধরনের পরিকল্পনাই প্রয়োজন। আমেরিকায় স্টুডেন্ট মেইল ও আইডি দিয়ে লগইন করলে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট ফ্রি। এটি বাংলাদেশের নিশ্চিত করা যায়। কারণ শিক্ষা একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। এখানে সবাইকে সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর মহামারি কোনো ছুটি নয়, এই মানসিকতা আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। বাকি রাখা ক্লাস ফেলে রাখা যাবে না। শেষ করতে হবে।
বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার উন্নয়নে কোনো ধরনের প্রয়োজন পড়লে এই তিন শিক্ষকই কাজ করতে চান বলেও আলোচনায় জানান।
অনলাইন শিক্ষা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিকল্পনা সারাবাংলা ফোকাস