Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনগুণ লাভের কথা বলে ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ; অবশেষে ধরা


২৫ জুন ২০২০ ০১:০৮

ঢাকা: তথ্য ছিল মতিঝিলে স্বদেশ করপোরেশনের অফিসে নানা ভাবে মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে। শুরু হয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। মেলে শত রকমের ফাইল আর ফাইল। দেখা যায়, ঋণ দেওয়ার কথা বলে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৪-৫ হাজার জনের কাছ থেকে জামানত হিসেবে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বদেশ করপোরেশন নামে কোম্পানিটি।

শুধু তাই নয়, গ্রাহকের চাপে হাতিয়ে নেওয়া জামানতের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নামেও এ প্রতিষ্ঠান করেছে চেক জালিয়াতির প্রতারণা। জামানতের টাকা ফেরানোর নামে যে চেক গ্রাহকদের দেওয়া হয়, সেই অ্যাকাউন্টে বিগত দুই বছরে কোনো লেনদেন হয়নি, নেই কোনো টাকাও।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হল সংলগ্ন সমবায় ব্যাংক ভবনের পঞ্চম তলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে স্বদেশ করপোরেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল কবীর ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

পরে সেখানে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাইফুল কবীরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

অভিযানের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুত করার প্রমাণ পায়। তারা  এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুদ করে বেশি দামে বিক্রি করে আসছিল। তবে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, স্বদেশ করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল কবীর সরকারের কোনো অনুমোদন ছাড়া তার প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লোক নিয়োগ দেন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্য থেকে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কোনো নিয়োগপত্র পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

‘মৌখিকভাবে যাদের নিয়োগ দেওয়া হতো তাদের গ্রাহক ধরে আনার কঠিন টার্গেট দিয়ে মাঠে নামাতো স্বদেশ করপোরেশন। মাঠে গিয়ে তারা লোকজনদের জামানতের বিনিময়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ঋণ পাওয়ার প্রলোভন দেখাতো। এতে সমাজের দরিদ্র ও নিম্ন শ্রেণির লোকজন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জামানত দিতে থাকেন। এভাবে সারাদেশে স্বদেশ করপোরেশনের ২২টি শাখার মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে সারাদেশে প্রায় ৪-৫ হাজার লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় স্বদেশ করপোরেশন।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, জামানতকারীরা যখন ঋণের জন্য ঘুরতে থাকেন, তখন এড়িয়ে চলতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও ঋণ না পেয়ে গ্রাহকরা জামানত ফেরত চাইলে তা দেয়ার নামেও নতুন প্রতারণা শুরু করে স্বদেশ করপোরেশন। জামানতের টাকা ফেরতের নামে তারা গ্রাহকদের চেক দেয়। কিন্তু চেক যে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে দেয়া হয়, সেই অ্যাকাউন্টে দুই বছরে কোনো লেনদেনের রেকর্ড নেই এবং কোনো টাকাই সে অ্যাকাউন্ট ছিল না। এভাবে অসংখ্য গ্রাহক তাদের এই প্রতারণায় ভোগান্তিতে পড়েন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকে বেশকিছু জিনিসপত্র জব্দ করেছি, যেগুলোর কোনো অনুমোদন নেই।’

সে ব্যাপারে বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে আমরা দেখলাম স্বদেশ করপোরেশনের কার্যালয়ের একটি কক্ষে অবৈধভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মজুত করা হয়েছে, যেগুলোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন নেই। সেখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ফ্লোর ক্লিনার। এছাড়া সেখানে অরেঞ্জ জুস ও মশার কয়েলের প্রচুর খালি প্যাকেটও পাওয়া যায়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন ধারায় সাইফুল কবীরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলার আলামত হিসেবে প্রাপ্ত অননুমোদিত জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে নিয়মিত মামলা করা হবে।

২০ কোটি গ্রেফতার দুর্নীতি বীমা প্রতিষ্ঠান স্বদেশ করপোরেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর