ডিজি হেলথের অপসারণ দাবি এফডিএসআরের
২৫ জুন ২০২০ ০১:২৯
ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি, হেলথ) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টর’স সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটি (এফডিএসআর)। এ বিষয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপিকে।
বুধবার (২৪ জুন) সংগঠনটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন ও মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এই চিঠি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে। চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক ও তার অনুগ্রহভাজনদের কর্মকাণ্ডে, অনিয়ম, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির এক আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
চিঠিতে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অভিযোগ গুলো হলো-
১- মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবের প্রাক্কালে নকল মানহীন এন৯৫ মাস্ক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পাঠানোর সঙ্গে সরাসারি জড়িত ছিলেন। টেলিভিশনে কোটি মানুষের সামনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সরাসরি মিথ্যা বলেন যে এন ৯৫ আমেরিকা থেকে আসে বলেই এটা পাওয়া যাচ্ছে না। এন ৯৫ আমেরিকাও চীন থেকে সংগ্রহ করে। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর ক্রয় করে ঠিকাদারের কাছ থেকে। সরাসরি নয়।
২- শুরু থেকে এই মহাপরিচালক বলে এসেছেন যে, তার দফতর কভিড মোকাবেলায় প্রস্তুত। অথচ চিকিৎসকদের শুরুতে তারা পিপিই দিতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, তাদের প্রস্তুতিহীনতা পদে পদে সরকারকে বিব্রত করেছে।
৩- আবুল কালাম আজাদ শুরুতে বলেছেন, বাংলাদেশের আর্দ্রতার কারণে কভিড বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তারপর বলেছেন, দিনে ৬৫ হাজার রোগী হবে। তারপর আবার বলেছেন, এই রোগ দেশে তিনবছর বা তার বেশিও থাকতে পারে। এভাবে তিনি দেশের মানুষকে ভুল বার্তা দিয়ে বারবার বিভ্রান্ত করেছেন। তাদের এই প্রস্তুতিহীনতার কারণে বিব্রত হতে হয়েছে সরকারকে যা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন।
৪- চূড়ান্ত অনিয়ম করে তিনি ভুঁইফোড়, অভিজ্ঞতাহীন জেকেজি হেলথকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের সরকারি পিপিই বিনামূল্যে দিয়েছেন। কোনো রকম তদারকি ছাড়া অনৈতিক কাজ করতে দিয়েছেন। এই জেকেজির চেয়ারম্যান একজন সরকারি চাকরিরত চিকিৎসক। অফিস সময়ে এই চিকিৎসকের উপস্থিতিতে জেকেজি’র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শনের নামে ভুয়া কাজের ভিডিও করেছেন। এই চিকিৎসক অফিস বাদ দিয়ে সেখানে কী করছেন, তার খোঁজ নেননি। সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে জেকেজি নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে এই কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অসদাচরণ।
৫- জেকেজি অসাধু তৎপরতা চালিয়ে রোগীদের স্যাম্পল ফেলে দিয়ে জাল রিপোর্ট দিয়েছে ও বেআইনিভাবে টাকা নিয়েছে। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে নিরীহ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের পকেট মেরেছে। এই মহাপরিচালক তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পত্রিকায় বলেছেন যে, জেকেজিকে সতর্ক করা হয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী তাদের কাজ স্থগিত করে, তদন্ত ও মামলা করার কথা। জেকেজির ফেলে দেওয়া স্যাম্পল ও ভুয়া রিপোর্টের কারণে কোভিড রোগীর সংখ্যা সংক্রান্ত সকল তথ্য ভুল ও অসত্য তথ্যে পরিণত হয়েছে ও এর সঠিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকার বিব্রত হওয়া ছাড়াও এটা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অথর্ব প্রমাণ করার এক আলামতে পরিণত হয়েছে।
এসব উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্লজ্জ, দুর্নীতিবাজ এই মহাপরিচালককে অপসারণ করে তার দুর্নীতির তদন্ত সাপেক্ষে তার ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং তার নেতৃত্বে থাকবার কারণে মন্ত্রী হিসেবে আপনার সততাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
চিঠিতে অবিলম্বে এই মহাপরিচালককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার দুর্নীতির তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে।