ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সর্বৈব ব্যর্থতায় দেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে নিজ বাসা থেকে জুম মিটিং কনফারেন্সে তিনি এ অভিযোগ করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় করোনা পর্যবেক্ষণ সেল থেকে পাওয়া সবশেষ তথ্য তুলে ধরার জন্য এ কনফারেন্স আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য শেষে জুম মিটিংয়ে যুক্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে জুম মিটিংয়ে যুক্ত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘করোনা নামে অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে গোটা বিশ্ব। এর আঘাতে স্থবির হয়ে আছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই চরম দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। যদিও লাশের মিছিলে যুক্ত হওয়া একেকজন মানুষ সরকারের কাছে কেবলই একটি সংখ্যা মাত্র!’
তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রতিটি পরিবারেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে যতটা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, তার চেয়ে বেশি আতংকগ্রস্থ এই ভেবে যে, ন্যূনতম চিকিৎসা পাওয়া যাবে কি না?’
সারাদেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারি হিসাবে ইতোমধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছে ৪১ জন মানুষ। অথচ প্রথম দেড় মাস প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১০ জনের নিচে। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। একইভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজারের মতো মানুষ। যদিও একদিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার নমুনা। যদি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তো তবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো আক্রান্তের সংখ্যা, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শনাক্তের প্রথম দিকে মৃত্যুর হার অনেক কম থাকলেও এখন বাড়ছে লাগামহীনভাবে। শনাক্তের ৭৯তম দিনে প্রথম ৫০০ জন মৃত্যু ছাড়ালেও পরবর্তী ১৬ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো ৫০০ ছাড়ায় আর সর্বশেষ মাত্র ১২ দিনে মৃত্যু ছাড়ায় ৫০০ জনে। পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ২১৫টি দেশের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে নমুনা পরীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের গবেষণায় বলা হয়েছে- মূলত বয়স্ক ও অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে তুলনামূলক কম বয়সী মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন বেশি। ফেব্রুয়ারির শেষে চীন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-এর যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ ভাগের বয়স ছিলো ৬০ বছরের ওপরে। সেখানে বাংলাদেশে ৪ জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬১ ভাগের বয়স ছিল ৬০ এর নিচে।’
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, ‘বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশিরা মারা গেলেও সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে। আমেরিকায় অনেক প্রবাসীর মৃত্যু হলেও তাদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকার। শুধু সৌদি আরবেই এ পর্যন্ত করোনা ও উপসর্গে মারা গেছেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে জীবন হারিয়েছেন পাঁচ জন চিকিৎসক।’
তিনি জানান, করোনায় ফ্রন্টলাইনার্স (চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী) বৈশ্বিক হারে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত ৫১ জন চিকিৎসক জীবন দিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯৩ জন, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট ৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে মোট পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজারের অধিক। জীবন উৎসর্গ করেছেন ৩২ পুলিশ সদস্য। মাঠের যোদ্ধা সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৪ জন। আর করোনায় প্রাণ দিয়েছেন সাত অকুতোভয় সৈনিক।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন কমপক্ষে ছয় জন। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ গুণীজন হারানোর অপূরণীয় ক্ষতি কোনোদিন কাটাতে পারবে না দেশ। এখনো করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাজারো নাগরিক।