পরিত্যক্ত লাশের রহস্য উদঘাটন: ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধে খুন
২৫ জুন ২০২০ ১৮:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভবন থেকে খুন হওয়া এক নারীর লাশ উদ্ধারের একদিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্বামীর খোঁজে আসা ওই নারীকে ফুসলিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই বন্ধু মিলে খুন করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার সিআরবি এলাকায় রেলওয়ের একটি পরিত্যক্ত বাংলো থেকে মালেকা বেগমের (৪৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। মালেকা নগরীর বিআরটিসি এলাকার একটি কলোনির বাসিন্দা আবুল হোসেন সুমনের স্ত্রী। সুমন নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডির দিনমজুর।
গ্রেফতার তিন জন হলেন— ফলমণ্ডির ফল টানার শ্রমিক মো. রুবেল (২৭) ও তার বন্ধু মো. সুমন (২০) এবং নগরীর এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা মাইকেল বড়ুয়া (৩২)।
নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালেকা স্বামীকে খুঁজতে ফলমণ্ডিতে এসেছিল। সে মাদকাসক্ত। রুবেল ও সুমনও মাদকাসক্ত। স্বামীকে খুঁজে দেওয়ার কথা বলে তারা মালেকাকে সিআরবিতে পরিত্যক্ত বাংলোতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে তারা ইয়াবা সেবন করে। এরপর ধর্ষণের চেষ্টা করলে মালেকা চিৎকার দেয়। তখন দু’জন মিলে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তার মোবাইল নিয়ে চলে যায়। পরে মোবাইলটি বিক্রি করে মাইকেল বড়ুয়ার কাছে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে আমরা সূত্রবিহীন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছি ও তিন জনকে গ্রেফতার করেছি।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে জানান, প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর মালেকা আবুল হোসেনকে বিয়ে করে। এক বছরের এক সন্তান নিয়ে মালেকা থাকত সিলেটের শায়েস্তাগঞ্জে। গত ১৮ জুন টাইগারপাস মাজার কলোনিতে বোনের বাসায় বেড়াতে আসে। ২২ জুন ওই বাসায় ছেলের দুধ কেনা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবুল হোসেন বাসা থেকে রাগ করে বেরিয়ে যান। রাত ১২টায়ও বাসায় না ফিরলে মালেকা ফলমণ্ডিতে স্বামীকে খুঁজতে যান।
‘রুবেলের কাছে মালেকা আবুল হোসেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। রুবেল জানায়, আবুল নিয়মিত পরিত্যক্ত বাংলোতে বসে নেশা করে। স্বামীকে খোঁজার জন্য রুবেল ও সুমনের সঙ্গে মালেকা ওই বাংলোতে যান। যাওয়ার সময় থানার টহল টিমের সদস্যরা তাদের দেখতে পেয়ে কোথায় যাচ্ছে জানতে চান। তারা জবাব দেয়, বাসায় যাচ্ছে। বাংলোতে নিয়ে তারা মালেকাকে ইয়াবা সেবন করায়। নিজেরাও ইয়াবা সেবন করে। এরপর প্রথমে রুবেল তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মালেকা চিৎকার দেন। তখন সুমনও গিয়ে দু’জনে মিলে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মালেকা চিৎকার করতে থাকলে দু’জন মিলে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। মালেকার হেফাজতে থাকা মোবাইল নিয়ে তারা চলে যায়,’— বলেন ওসি মহসীন।
তিনি আরও জানান, ছিনতাইকারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত সুমনের কাছ থেকে মাইকেল বড়ুয়া ২ হাজার ৮০০ টাকায় মোবাইলটি কিনে নেয়। সেই টাকা দিয়ে বুধবার আবারও ইয়াবা সেবন করে রুবেল ও সুমন। তাদের গ্রেফতারের পর মাইকেলের কাছ থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজিরের পর তিন জনই ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসি মহসীন।