Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জোনিং, লকডাউন, ম্যাপিং নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা


২৭ জুন ২০২০ ০০:৩২

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশে ১৭টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে তারা এখনও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা পায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয়ের কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি কমিটি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয়ের কাজ এরইমধ্যে সম্পন্ন করেছে। তবে সেইসব এলাকায় কীভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে তা পরিপূর্ণ পরিকল্পনা শেষ করার আগে কোনো নাম তারা প্রকাশ করছে না। এ ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছুটি ঘোষণা করা এলাকাগুলোতে কীভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে তা আসলে জানা নেই প্রতিষ্ঠানটির।

বিজ্ঞাপন

২২ জুন দেশের ১০টি জেলায় বিভিন্ন এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে এসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২১ দিনের জন্য ঘোষণা করা এ ছুটি এলাকাভেদে আগামী ৩০ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ২২ জুন রাতেই দেশের আরও পাঁচ জেলার রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২৩ জুন আরও চার জেলার রেড জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কী তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একটি কারিগরি গঠন করা হয়েছে। তারা বলতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, এই রেড জোন ঘোষণা করে সাধারণ ছুটি দেওয়ার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। কারণ কমিটির পক্ষ থেকে এখনো (২৪ জুন পর্যন্ত) কোনো তালিকা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়নি।

কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয় তো হয়ে গেছে। কিন্তু এখানে আরও অনেক বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সব এলাকা না হয়ে বিল্ডিংভিত্তিক লকডাউনও হতে পারে।’

তাহলে দেশের ১৭ জেলার বিভিন্ন এলাকায় কিভাবে লকডাউন চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কারোরই কিছু জানা নেই। কারণ এ বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আমাদের এখান থেকে মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে যাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে। এর পরে বাস্তবায়ন হবে। তবে কোনো জেলায় যদি প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে তবে সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। কারণ আলাদাভাবে জেলা প্রশাসক বা স্থানীয় প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা না করা হলেও তাহলে কীভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় কিন্তু একজন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। কুমিল্লায় একজন সিনিয়র সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে মাল্টিসেক্টরিয়াল একটা করোনা কন্ট্রোল কমিটি হয়েছে। জেলা প্রশাসক সেই কমিটির সভাপতি। এছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অনেকেই আছেন। এ টু আই এর একজন কর্মকর্তাও ছিলেন আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে। উনারাই আমাদের জানান যে রেড জোনগুলোকে লকডাউন করার বিষয়ে। সেই হিসেবে আমি অধিদফতরকে অবগত করি।’

তিনি বলেন, ‘সংক্রামক ব্যাধি আইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। উনি উনার সেই ক্ষমতাবলে একটা ডিগ্রির বলে আমাদের কাছে ডেলিগেট করেছে যে একটা জেলার কোথায় কোথায় রেডজোন ডিক্লেয়ার করতে পারব। তবে লকডাউন প্রশাসনিক বিষয়। সেটা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ক্ষেত্রে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে ডিসি মহোদয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়ে। আমি রেড জোন কোন গুলো সেটা জানিয়েছি মাল্টিসেক্টরিয়াল কমিটিতে। সেখানে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন আমাদের এমপি বাহাউদ্দিন বাহার স্যার। পরবর্তীতে ম্যাপিং করে চারটা জোন নির্ণয় করি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। পরবর্তীতে ডিসি মহোদয় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাক্রমে রেড জোন ডিক্লেয়ার করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে রেড জোন নির্ণয় করে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানিয়েছি। তারও দুইদিন পরে রেড জোন ডিক্লেয়ার করা হয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।’

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. তওহীদ আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘জোনিং বিষয়ে আমাদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটা নির্দেশনা আছে। আমাদের কিছু গাইডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেটা নির্ধারণ করে অধিদফতরে পাঠাতে হয়, জানাতে হয়। এরপরের সিদ্ধান্ত তারা আমাদের জানাবেন। সেখানে ছুটি দেওয়া আরেক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এখানে আরও বেশকিছু মন্ত্রণালয় জড়িত রেড জোনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে। জোনিং ও লকডাউন কিন্তু দুইটি জিনিস। জোনিং আমরা করে দেবো কিন্তু লকডাউন বিষয়ে কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত আমাদের এখাণে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর প্রধান, আমিসহ সবাই মিলে একটা সমণ্বয়ের ভিত্তিতে এই কাজগুলো হচ্ছে যতটুকু করা যায়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে যদি আলাদা ভাবে কোনো নির্দেশনা আসে তবে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। সেটা না আসা পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন বাস্তবতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যেটা সঠিক বলে বিবেচনা করবেন সেটা করতে পারেন।’

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এখনো কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা পাইনি। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্তমানে ১৭ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছে। এ ক্ষেত্রে সেসব জেলার সিভিল সার্জনরা যেসব এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নির্ণয় করছেন আমরা সেই এলাকাগুলোকেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয় করা আমাদের কাজ না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে যদি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা দিয়ে বলে কোন এলাকাগুলো লকডাউন করতে হবে সেক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এক্ষেত্রে আসলে লকডাউন কিভাবে হবে সেটাও একটা বিষয়। পুরো এলাকা না করে যদি কিছু এলাকায় দেখা যায় কয়েকটা বাড়ি বা একটা বাড়িতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত আছে তবে সেই বাড়িগুলোও লকডাউন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তিন থেকে চারটা বাড়ি বা ১০ থেকে ১২ টা বাড়ি ধরেও হতে পারে। কিন্তু অনেকগুলো এলাকায় একসঙ্গে লকডাউন জরুরি বলে মনে হয় না। কিন্তু এখন কীভাবে কী হচ্ছে তা নিয়ে আসলে আমার কাছে কোনো তথ্য আসেনি। আমি এটা নিয়ে একটু আগে মেয়রদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি উনাদেরকেও প্রায় একই কথা বলেছি। তালিকা পেলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা বাসা বিবেচনা করেও লকডাউন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমার কাছে কিছু আসে নি এখনো। কুমিল্লা সহ বেশ কিছু স্থানে যারা ছোটছোট এলাকা ঘিরে করছে তাদের প্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তবে আসলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা পাওয়ার পরেই আমরা মূলত পরের ধাপ নিয়ে ভাবব।’

কবে নাগাদ দেওয়া হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা?

এ বিষয়ে কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের একটু বুঝতে ভুল হচ্ছে। প্রথম যখন ঘোষণা করা হয় তখন বলা হয়েছিল যে পাঁচটা জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে এই জোনিং কার্যক্রম শুরু হবে। এই পাঁচটার মধ্যে ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুইটা এলাকা। একই সঙ্গে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায়। যার মধ্যে ইতোমধ্যেই রাজাবাজারে কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ওয়ারীতে এখনো শুরু হয় নি। ওয়ারী বাদ দিয়ে বাকি এলাকাগুলোতে পরীক্ষামূলকভাবে এরইমধ্যে এই কার্যক্রম চলছে। ওয়ারীর বিষয়ে আমাকে গতকাল জানানো হয়েছে এই এলাকাও প্রস্তুত লকডাউনের জন্য। যাই হোক আমরা হয়ত এক দুই দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলে এই বিষয়ে জানিয়ে দেব। জানিয়ে দিলে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে এই এক্সপেরিমেন্টগুলো চলতে থাকবে।

ম্যাপিং বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কোনো স্থানে যে ম্যাপিংয়ের বিষয়ে কথা হচ্ছে সেগুলো তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না। আমাদের যারা লোক তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করছেন। কোন টার্গেট ধরলে কী হয় সে বিষয়ে কাজ করছেন। এক সঙ্গে পুরো বাংলাদেশ কিন্তু লকডাউন হবে না। আমরা আগে এই পরীক্ষামূলক এলাকাগুলোর ফলাফলের উপর নির্ভর করেই কিন্তু ভবিষ্যতে কাজ করবো। আমরা যেটা চাচ্ছি জীবনযাত্রা যাতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত না হয়, অর্থনৈতিক কার্যক্রম যথাসম্ভব যাতে চালানো যেতে পারে সেগুলো লক্ষ রাখতে। একই সঙ্গে সামাজিক জীবনেও যাতে যথাসম্ভব চালানো যায় সেটাও চেষ্টা করছি। সেগুলো বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আমরা ভবিষ্যত কার্যক্রম যাতে চালিয়ে যেতে পারি। এটা কিন্তু একটা চলমান প্রক্রিয়া। পুরা বাংলাদেশ একসঙ্গে রেডও হবে না আবার পুরো বাংলাদেশ একসঙ্গে গ্রীনও হবে না। কাজেই যখন যেখানে যেমন করে প্রয়োজন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ক্ষেত্রে কী কোনো শিথিলতা আসতে যাচ্ছে রেড জোন এলাকার কার্যক্রমে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সেই বিষয়ে আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। সেই কমিটিকে কিন্তু বলা হয়েছে যে প্রয়োজনে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অথবা নতুন কোনো পরিকল্পনা আসে তবে সেটা সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবে। একই সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও পরিবর্তন করতে পারবে। সুতরাং এগুলো সবই আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া।

তবে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা সাধারণ ছুটি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান আটবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস এর উত্তরও দেননি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেককে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এর আগে, বাংলাদেশে ১ জুন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠক শেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী উভয়েই সমগ্র দেশকে তিনটি জোনে চিহ্নিত করে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

৫ জুন এক অনলাইন কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মতামত দেন। এ বৈঠকে বেশকিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। এ বৈঠকে কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয় করা হবে ও কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়।

৯ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন শুরু করা হয় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায়।

পরবর্তীতে ১০ জুন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে একটি কারিগরি কমিটি গঠন কর হয়। এ কারিগরি গ্রুপের সভাপতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এতে সদস্য সচিব করা হয় সিডিসি এর উপপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. মো. জহিরুল করিমকে। এ ছাড়াও এ কমিটিতে আছেন আরও ১১জন সদস্য।

একইদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সাতটি নির্দেশনা জারি করেন। এই নির্দেশনাগুলো দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রের কাছে পাঠানো হয়।

এ দিন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লকডাউন নীতিমালা চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এসব নীতিমালার ওপর নির্ভর করেই রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোন নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়।

এদিন জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে অবিলম্বে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়গঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কি হবে তা প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

এদিন আরও জানানো হয়, সংক্রামক ব্যাধি আইনের ৩০ ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের নিকট জোনিং ঘোষণার ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।

এ ছাড়াও বিদ্যমান বা নতুন এলাকায় জোনিং সিস্টেম প্রস্তাব বা পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় কমিটি থাকবে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সংক্রামক কমিটিগুলোও এই দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কমিটি জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত চাইবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয় কারিগরী গ্রুপের মতামত সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

বাস্তবায়নাধীন জোন এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল/ছুটি/দায়িত্ব পালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/অধিদফতর/পরিদফতর/দফতর/প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে বলে জানানো হয় নির্দেশনায়।

এ বিষয়ে ১৪ জুন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এই ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হবে অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে। একসঙ্গে সব এলাকায় রেড জোন ঘোষণা করা হবে— এমন তথ্য তাই সঠিক নয়। এক্ষেত্রে বলেন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় পর্যায় থেকেও কাজ করা হবে। এক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা বিবেচনায় সরকার বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একটা জাতীয় পরামর্শক কারিগরি কমিটি আছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটা কমিটি আছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা করা হচ্ছে। এসব তালিকা অনুযায়ী আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে, সেসব এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটি সংক্রান্ত বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়ন করব। কারণ রেড জোন সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে।’

১৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতর যেসব এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, সেসব এলাকায় তখনই লকডাউন কার্যকর হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

১৮ জুন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্থানীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে সেখানে লকডাউন হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালী। ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকেও এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

করোনাভাইরাস রেড জোন লকডাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর