‘করোনার কারণে আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়তে পারে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ’

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি [ফাইল ছবি]

ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়তে পারে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘পাশাপাশি শ্রেণিঘণ্টার সঙ্গে সমন্বয় করে কমানো হতে পারে মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির সিলেবাস। এমন পদক্ষেপের কারণে আগামী বছরে ঐচ্ছিক ছুটিও কমিয়ে আনা হবে।’

শনিবার (২৭ জুন) এডুকেশন রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত ‘করোনাকালে শিক্ষার চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এ ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দীপু মনি আরও বলেন, ‘এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বিষয় কমিয়ে অল্প সময়ে নেওয়া যায় কি না সেটি ভাবছে সরকার। তবে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই সিলেবাস শেষ করে ফেলায় আপাতত এটি কমিয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।‘

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে আমরা কোটি কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না। তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল-কলেজ খোলা হবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হবে তা পুষিয়ে নিতে আমরা কিছু পরিকল্পনা তৈরি করেছি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘এইচএসসির এই বছরের সিলেবাস কমানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ তারা তো তাদের সিলেবাস সম্পন্ন করেছে। এখন কথা হচ্ছে পরীক্ষা নিয়ে। আবারও এত লাখ লাখ পরিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলব? তাহলে সেই পরীক্ষাটি আমরা কম সময়ে নিতে পারে কি না। কম সংখ্যক পরীক্ষা নিতে পারে কি না এ ধরনের সব ভাবনাই ভাবছি।‘

‘বর্তমান সংকট পুষিয়ে নিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হবে, নাকি ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে তা ভাবনাচিন্তা চলছে। শিক্ষা বর্ষ বাড়ানো হলে আগামী বছরে ঐচ্ছিক ছুটি কমানোর প্রয়োজন হবে। একটি শিক্ষাবর্ষে আমরা ১৪০-১৪২ দিন পড়িয়ে থাকি। বাকিটা ছুটি থাকে। তাই এবছর শিক্ষা বর্ষ বাড়াতে হলে আগামী বছরের ছুটি কমিয়ে হলেও তা করা হবে।’—বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জনের দিকটিতে আপস করা হবে না। কারিগরি শিক্ষায় যতটুকু শিখনফল ও দক্ষতা কাম্য সেটুকু যদি শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে না পারে তাহলে তাদেরকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

সংসদ টিভির ক্লাস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মাঠপর্যায়ের জরিপে আমরা জানতে পেরেছি সংসদ টিভির ক্লাসগুলো মোবাইল ফোনসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। তবে এখনো ১০ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে সংসদ টিভির ক্লাসগুলো পৌঁছায়নি। কিন্তু এই দশভাগকে পিছনে ফেলে আমরা সামনে এগিয়ে যাব না। তাই ইতোমধ্যেই আমরা টোল ফ্রি মোবাইল সুবিধা দেব, খুব দ্রুত সেটা চালুও করতে যাচ্ছি। যার মাধ্যমে সেই ১০ ভাগ শিক্ষার্থীও শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে পাঠের সুযোগ পাবে।

এছাড়া ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বাজেটে প্রস্তাবনা থাকলেও শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রকে এর বাইরে রেখে বা নামমাত্র মূল্যে কিভাবে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া যায় সেটা নিয়েও সরকার ভাবছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও প্রচার মানুষকে সচেতন করা গণমাধ্যমের বড় দায়িত্ব। একদিকে ইন্টারনেটের ওপর সবকিছু নির্ভরশীল হচ্ছে অন্যদিকে এর ব্যবহার বাড়ালে সকল প্রস্তুতি বিফলে যাবে। ইন্টারনেট মানুষের হাতের নাগালে রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে শিক্ষার একটি প্রজন্ম হারিয়ে গেলে বা কয়েক প্রজন্ম হারিয়ে গেল তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ এই কারণে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মুসতাক আহমদ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম।

করোনা ভাইরাস মন্ত্রী শিক্ষাবর্ষ