অ্যান্টিবডি কিট: হাল ছাড়ছেন না গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা
২৭ জুন ২০২০ ২৩:৫৫
ঢাকা: সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) ও নির্দিষ্টকরণের (স্পেসিফিসিটি) ন্যূনতম সীমা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় (যথাক্রমে ৯০ ও ৯৫ শতাংশ) না হওয়ায় অ্যান্টিবডি কিটের রেজিস্ট্রেশন আবেদন নামঞ্জুর হলেও হাল ছাড়ছেন না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। কিটের মান উন্নয়নে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন তারা। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কারিগরি কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা।
শনিবার (২৭ জুন ) রাতে ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ কিট প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা হাল ছাড়ছি না। আমাদের আস্থা বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর, কারও মুখের কথার ওপর না। কিটের মান উন্নয়নে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। আজও বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি, মিটিংয়ের ওপরই আছি। আমরা এর শেষ দেখে নেব।’
গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিএসএমএমইউর গবেষক দল যেহেতু ১০৯ জন করোনা পজিটিভ রোগীর ওপর অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট প্রয়োগ করে ৭৬ জনের দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি শনাক্ত করতে পেরেছেন, সেহেতু গণস্বাস্থ্যের কিটের সেনসিটিভিটি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়েই রয়েছে। যে ৩৩ জনের দেহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়নি, করোনা আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি নাও হতে পারে। তাছাড়া পিসিআর টেস্টেও ৩০ শতাংশ ভুল রিপোর্ট আসে— এসব বিষয় নিয়েও বিএসএমএমইউ’র কারগরি কমিটির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা।
অধিকন্তু ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ রোগীর দেহে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি গণস্বাস্থ্যের কিটে শনাক্ত হয়েছে বলে যে মতামত বিএসএমএমইউ গবেষক দল দিয়েছেন, সেটিও নিজেদের অনুকূলে রয়েছে বলে মনে করছেন গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ওষুধ প্রশাসনকে বিএসএমএমইউ যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটির মূল কথা হচ্ছে, ‘এই কিট দেশে করোনা রোগের ব্যাপকতা পর্যবেক্ষণ (সেরোসার্ভিলেন্স) কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, ইতিপূর্বে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এই কিটের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এতে করে কোভিড প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারেনটাইন সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউন উত্তোলনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’
এ প্রসঙ্গে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ যে রিপোর্ট ওষুধ প্রশাসনে জমা দিয়েছে, সেটির অ্যাপ্রোস আর ওই রিপোর্ট সম্পর্কে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যের অ্যাপ্রোস এক না। ওষুধ প্রশাসনে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য ছিল সাময়িক উত্তেজনা প্রসূত। তারপরও বিএসএমএমইউর কারিগরি দলকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে আমরা এখনও কাজ করছি। কিটের মান উন্নয়নে তারা আমাদের সহযোগিতা করছে।’
এদিকে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের জন্য গত ২৫ জুন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর যে দুইটি নীতিমালা বা গাইডলাইন অর্থাৎ মার্কিন কেন্দ্রীয় ওষুধ সংস্থা ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) নির্ধারিত নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণের শর্ত দিয়েছে, সেইগুলো পূরণেও প্রস্তুত গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিয়ে বিএসএমএমইউর গবেষক দলের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন তারা।
শুধু বিএসএমএমইউ নয়, এ ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সঙ্গেও কথা বলতে চান গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা। কারণ প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান গণস্বাস্থ্যকে দেওয়া চিঠিতে বলেছিলেন, ‘পরবর্তী সময় গণস্বাস্থ্য কিটের মান উন্নয়নের ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে ২৫ জুন। আর মার্কিন কেন্দ্রীয় ওষুধ সংস্থা ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তাদের নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছে ২৪ জুন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমরা পরিস্থিতির শিকার। তদুপরি তারা যে নীতিমালা করেছে, সেটি এমন কিছু না। আমরা এর চেয়ে বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। খুব শিগগিরই আমরা আমাদের কাজ শেষ করে ফেলব।’
অ্যান্টিবডি কিটের মান উন্নয়নের পাশাপাশি অ্যান্টিজে কিটের এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের কাজও দ্রুত গতিতে শেষ করতে চাচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে স্যালাইভা কালেকশন ডিভাইসসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যান্টিজেন কিটের স্যাম্পল বিএসএমএমইউতে জমা দিয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, এই কিট কোন মানদণ্ডে বিচার করা হবে, সেটির ব্যাপারেও ওষুধ প্রশাসনের কাছ থেকে আগেভাগেই পরিষ্কার বক্তব্য জেনে নিতে চান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই ওষুধ প্রশাসনকে চিঠি দেবেন তারা।’
এ প্রসঙ্গে ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এফডিএসহ বিশ্বের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেওয়া মানদণ্ড অনুযায়ী, আইএসও ১৩৪৮৫ অনুসরণ করে কিট তৈরি করেছি। আর এখন বলা হচ্ছে, কয়েকদিন আগে প্রকাশিত মার্কিন এফডিএর নীতিমালার কথা। সুতরাং আমরা কালই (২৮ জুন) ওষুধ প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইব, আমাদের অ্যান্টিজেন কিট তারা কোন মানদণ্ডে বিচার করবে? আমরা সেই মানদণ্ডেই কিট ডেভেলপ করব।’