Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলো আধুনিকায়ন করা হবে’


২৮ জুন ২০২০ ১৯:১১

গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক (ফাইল ছবি)

ঢাকা: বিজেএমসি’র ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলোকে বর্তমান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)।

রোববার (২৮ জুন) বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) কার্যক্রম পর্যালোচনা বিষয়ে এক অনলাইনে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। সভায় বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম, এনডিসি উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘২০১৪ সাল হতে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের (৮ হাজার ৯৫৪ জন) প্রাপ্য সব বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের (২৪ হাজার ৮৮৬ জন) প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্র্যাচুইটি এবং এর সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ হারে অবসায়ন সুবিধা একসঙ্গে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এজন্য সরকারি বাজেট থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি/যৌথ উদ্যোগ/জি টু জি/লিজ মডেলে পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন মডেলে পুনঃচালুকৃত মিলে অবসায়নকৃত বর্তমান শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে। সেইসাথে এসব মিলে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি খাতে মাসিক মূল মজুরি ২ হাজার ৭০০ টাকার বিপরীতে উৎপাদনশীলতা ও মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নের পর বিজেএমসি’র পাটকলগুলোকে তা ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারি মিলে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচে মজুরির অংশ ৬০ থেকে ৬৩ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের প্রায় তিনগুণ। উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় বাজারে টিকে থাকার জন্য বিজেএমসিকে হ্রাসকৃত দরে পণ্য বিক্রয় করতে হয়। এতে করে পাটখাতে সার্বিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ/বিনষ্ট হয় এবং বেসরকারি খাতের মিলগুলো উৎপাদিত পণ্যের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি পাটখাতের সামগ্রিক ভারসাম্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নস্যাৎ করছে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় অন্যতম প্রধান বাজার ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানিতে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এতে কেবল বিজেএমসিই নয়, বেসরকারি খাতের রফতানিকারকেরাও বিপাকে পড়েছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে পাটপণ্য উৎপাদনে বিজেএমসি’র অবদান মাত্র ৮ দশমিক ২১ শতাংশ। রপ্তানিতে এ হার আরও কম ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। নামমাত্র উৎপাদন ও উল্লিখিত রফতানির জন্য সরকারি বাজেট থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে মিলগুলোর কার্যক্রম বর্তমান কাঠামোতে অব্যাহত রাখা অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের অতি ব্যবহারের ফলে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে পাটসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর কদর সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে।’

তিনি জানান, সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদে দ্বিতীয় কমিটিতে ‘প্রাকৃতিক তন্তুর উদ্ভিজ ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহারবিষয়ক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে পাটের কদর ও ব্যবহারিক মূল্য বৃদ্ধির একটি সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি গত ২ দশকে বিশ্বজুড়ে পাটের তৈরি নানাবিধ ও বহুমুখী পণ্যের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। কিন্তু বহুমুখী পাটপণ্যের উপযোগী কাঁচামাল তৈরির উৎপাদনের ক্ষমতা বিজেএমসি’র পাটকলগুলোতে নেই।

সাম্প্রতিক বহুমূখী পাটপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এ খাতে রফতানি ২৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। করোনাভাইরাসজনিত সংকটের কারণে প্রবৃদ্ধির এই ধারা গত ২ মাসে কমে আসায় মে ২০২০ পর্যন্ত অন্যান্য সকল খাতে ঋণাত্নক প্রবৃদ্ধির বিপরীতে এ খাতে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এবং ১১ মাসে রফতানির পরিমাণ (৮১৭ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) গত অর্থবছরের সার্বিক পরিমাণ (৮১৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৬০/৭০ বছর আগের যন্ত্রপাতি দিয়ে স্থাপিত এসব মিলের কার্যক্ষমতা সময়ের ব্যবধানে হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তাছাড়া বিজেএমসির পুরনো ব্যবস্থাপনা কাঠামো অধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার উপযোগী নয়।

গোলাম দস্তগীর গাজী গোল্ডেন হ্যান্ডশেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীরপ্রতীক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর