Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ছেলেটা ছটফট করছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না’


২৮ জুন ২০২০ ২০:২২

ঈশান ও তার বাবা ইব্রাহিম [ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা]

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ মাস আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ছয় বছরের শিশু মো. ঈশান। ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও সম্প্রতি দেখা দিয়েছে আরেক জটিলতা। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে ছটফট করছে শিশুটি। তার বাবার অভিযোগ, তিনদিন ঘুরেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা পাননি।

তবে চিকিসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটিকে চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি বা ত্রুটি হচ্ছে না। অস্ত্রপচারের জন্য ছেলেটির ক্ষত শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগ, ইউরোলজি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঈশানের বাবা-মা। কান্নাজড়িত কন্ঠে ঈশানের বাবা মো. ইব্রাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তাররা বলছেন, অপারেশন করতে হবে। কিন্তু কেউ অপারেশন করতে রাজি হচ্ছেন না। প্রাইভেট ক্লিনিকেও রাজি হচ্ছে না। আমার ছেলেটা ছটফট করছে, কাঁদছে, চিৎকার করছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার ছেলেটা কি চিকিৎসা না পেয়ে মরে যাবে?’

ইব্রাহিমের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের কাথারিয়া গ্রামে। তিন সন্তানের মধ্যে ঈশান দ্বিতীয়। পেশায় থাই গ্লাস ব্যবসায়ী ইব্রাহিম গ্রামে বসবাস করেন।

ইব্রাহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার একতলা ঘর। চালের পাশ দিয়ে গেছে ১১ হাজার কেভির বিদ্যুৎলাইন। পাঁচমাস আগে একদিন আমার ছেলে ভুল করে ওই লাইনে হাত দেয়। এতে তারা সারাশরীর ঝলসে যায়। আমরা শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে যাই। মোটামুটি ছেলে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু গত ১০-১২ দিন ধরে তার নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথমে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহে আমি তিনবার চমেক হাসপাতালে গেছি। আজ ভোর ৬টায় আউটডোরে ছেলেকে নিয়ে যাই। আউটডোর থেকে আমাদের ইউরোলজি ওয়ার্ডে ডা. শিবপ্রসাদ নন্দীর কাছে পাঠানো হয়। তিনি অপারেশন লাগবে বললেও আবার আমাদের দশতলায় শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠান। আমরা ভেবেছিলাম, আজই (রোববার) অপারেশন হবে। দুপুর ২টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার পর আমাদের জানানো হয়, অপারেশন হবে না। তখন আবারও বাড়ি ফিরে এসেছি।’

এর মধ্যে বেশকয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যোগাযোগ করেও অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা করতে না পারার কথা জানান ইব্রাহিম।

ঈশান ও তার বাবা-মা [ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা]

যোগাযোগ করা হলে ডা. শিবপ্রসাদ নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিশুটির অপারেশন করতে হবে। কিন্তু তার আগে শিশুটির ক্ষতস্থান শুকাতে হবে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুটির শরীরের নিচের অংশ পুড়ে গেছে। সেটা শুকানোর জন্য কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগবে। সেজন্য তার তলপেটের পাশে নল ঢুকিয়ে বিকল্পভাবে প্রস্রাবের রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। ২১ দিন পরপর নল বদলে দিতে হয় এবং ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করতে হয়। বয়স কম হওয়ায় নল দিয়ে প্রস্রাবে স্বাভাবিকভাবে শিশুটির অস্বস্তি লাগছে। সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষতস্থান না শুকানো পর্যন্ত তো আমরা অপারেশনে যেতে পারি না। এরপরও শিশুটির বাবা যখন বারবার জোর করছিলেন, আমি পরামর্শের জন্য শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠিয়েছিলাম।’

‘সমস্যা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর যে সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে, আমাদের ডাক্তারদের মুখেও মাস্ক থাকে। রোগী এবং তাদের অ্যাটেনডেন্টের মুখেও মাস্ক থাকে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। এজন্য অনেক কথা আমরা সহজভাবে তাদের বুঝিয়ে বলতে পারছি না। এতে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রোগীর স্বজনরা একটু সেনসেটিভ মুডে থাকেন। তারা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ করেন।’- বলেন শিবপ্রসাদ।

এদিকে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অপারেশন করতে গিয়ে আমাদের বেশকয়েকজন ডাক্তার কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক রোগী কিংবা তাদের স্বজন যে করোনায় আক্রান্ত, তারা নিজেরাও জানেন না। তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ডাক্তাররাও আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য আমরা আপাতত জরুরি অপারেশন ছাড়া ছোটখাট অপারেশন বন্ধ রেখেছি। তবে জরুরিভাবে অপারেশন প্রয়োজন, এমন কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে আমরা অ্যালাউ করব না।’

অস্ত্রপচার চমেক ছটফট ছেলে প্রস্রাব বন্ধ সহ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর