‘শেষই হচ্ছে না’ খুলনা-মোংলা রেললাইনের কাজ, ব্যয় বেড়েছে ১২১ শতাংশ
২৯ জুন ২০২০ ০৭:৫১
ঢাকা: তিন বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পার হয়ে যাচ্ছে সাড়ে ১০ বছর। সেই সঙ্গে ব্যয় বেড়েছে ১২০.৮৫ শতাংশ। এরপরও প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। ‘খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এই চিত্র। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণের দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি মাসে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্র বন্দর মোংলার সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব হবে। এছাড়া সার্ক মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট স্থাপনের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মালামাল আমদানি রফতানি বাণিজ্য করা যাবে।
এছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যেও ব্যাপক প্রসার, দেশের শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারের ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যতা হ্রাস, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক যাতায়াত সহজ ও নিরাপদ হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর হতে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এর কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমবার ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একবছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতেও অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে তিন বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর তৃতীয়বার আবারও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও অগ্রগতি না হওয়ায় বর্তমানে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে, ভারতীয় ঋণের (এলওসি) আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল একহাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫১৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, ভারতীয় ঋণ থেকে একহাজার ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা। কিন্তু প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৪৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণের দুই হাজার ৩৭১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটির মোট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১২০.৮৫ শতাংশ।
আইএমইডি বলেছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল ৮৭ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৬৩.০১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫.৫৪ শতাংশ।
প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের দেরি। এছাড়া কাজের মাঝামাঝি এসে পরামর্শক পরিবর্তন করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘সিইজি-নিপ্পন কই জেভি’ থেকে স্টপ কনসালটেন্ট (stup consultant) দায়িত্ব গ্রহণ করে; কিন্তু কিছু জটিল নন টেন্ডার আইটেম আসায় যেমন অত্যাধিক লুজ সয়েল থাকায় ট্রিটমেন্ট, পাইল বারবার ফেল করায় ও বেস গ্রাউনিন্ডং, ইরকনকর্তৃক অধিক সংখ্যক আনাড়ি সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পের কাজ বারবার পিছিয়েছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, এই প্রকল্পের রেললাইন নির্মাণের কাজ বেশ পিছিয়ে আছে, যা কেবল ৫৪ শতাংশ মাত্র। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ জনবল নিয়োগ করে টার্গেট অনুযায়ী কাজ আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ ও যথাযোগ্য জনবল নিয়োগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে কাজের অগ্রগতি ও কাজের বরাদ্দ ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পে ব্যয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বক্ষণিক মনিটরিং রাখতে হবে।
প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি ও প্রজেক্ট ইম্পিলিমেনটেশন কমিটির সকল সভা সময়মতো আয়োজন করতে হবে। প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি জনবলের ভিসার মেয়াদ ন্যূনতম একবছর থাকা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জনবলের বিল পরিশোধ প্রক্রিয়াটি নিয়মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারের আইপিসি পরিশোধ করা দরকার। পরামর্শকদের বিলও সময়মতো পরিশোধ করা উচিত বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
জানতে চাইলে সদ্য সাবেক হওয়া রেলসচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি অনেক চেষ্টা করেছি প্রকল্পটির গতি বাড়ানোর, অনেকটা বেড়েও ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এখন আবার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে প্রকল্পটির বেসিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আশা করছি বাস্তবায়নের আর বেশি ঝামেলা হবে না। তবে ভারতীয় কোম্পানির কাজের গতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’