‘ধোঁয়াশা’তে চলছে ভার্চুয়াল কোর্ট, বেড়েছে ভোগান্তিও
২৯ জুন ২০২০ ১২:০৩
ঢাকা: সারাবিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চলছে সাধারণ ছুটি। কিন্তু দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানির অপেক্ষায় থাকা বিচারপ্রার্থীরা। ফলে অনলাইনে ঢাকার নিম্ন আদালত পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় ভার্চুয়াল অনলাইন কোর্টের বিচার কার্য। তবে এই পদ্ধতি নিয়ে অধিকাংশ আইনজীবী সন্তুষ্ট না। তারা বলছেন, অল্প কয়েকজন আইনজীবী ভার্চুয়াল কোর্টের সুবিধা গ্রহণ করতে পারলেও অধিকাংশরা তা থেকে বঞ্চিত।
সারাবাংলার প্রতিবেদকের কাছে কয়েকজন আইনজীবী জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে অন্ধকারে টিল মারার মতো করে! মামলার শুনানি কখন অনুষ্ঠিত হবে, পুটঅপ ঠিক মতো হয়েছে কিনা, মামলার ফাইলিং ঠিকঠাক জমা পড়েছে কিনা, মামলার পূর্বের আদেশ কি ছিলো, শুনানিকালে বিচারক আইনজীবীদের কথা স্পষ্ট বুঝছেন কিনা? সব কিছুতেই যেন ‘ধোঁয়াশা’! যার ফলে বাড়েছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি।
ঢাকার নিম্ন আদালতের আইনজীবী ইউসুফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভার্চুয়াল কোর্টকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবহার সময় বেশ কিছু সমস্যা দেখা গেছে। প্রথমত আমরা সরাসরি কোর্টে কোন মামলার শুনানির জন্য গেলে কনফার্ম থাকি কবে শুনানি হবে। সেই সাথে পূর্বের মামলার আদেশ দেখে পরবর্তী তারিখে সেভাবে শুনানির প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারতাম। কিন্তু ভার্চুয়াল কোর্টের ক্ষেত্রে মামলার নথি দেখা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছি। সেই সাথে আমরা জানি না কখন মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ জুনের আগে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি সিআরমিস কেস করেছিলাম। হঠাৎ ওই তারিখে আদালতের পেশকার ফোন করে জানায় যে আপনি যে সিআরমিস কেস করেছিলেন, নেন এখন শুনানি করেন বলে ফোন বিচারকের কাছে ধরে দেয়। ওই মুহূর্তে ঠিক কি করবো বুঝতেছি পারছিলাম না? বাধ্য হয়ে পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াও শুনানিতে অংশগ্রহণ করি। এছাড়াও অনলাইনে শুনানিতে নেটওয়ার্কের সমস্যা তো থাকেই। অনেক সময় দেখা যায় যে, বিচারক আমার কথা বুঝতে পারছেন না বা আমিও তার কথা শুনাতে পারছি না। তার পরেও বাধ্য হয়ে শুনানি করতে হচ্ছে, না করলে নামঞ্জুর হয়ে যাচ্ছে।’
নিম্ন আদালতের আরেক আইনজীবী মীর আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে জানান, অনলাইনের শুনানির জন্য দীর্ঘসময় বসে থাকতে হয়। দেখা যাচ্ছে পেশকার সময় দিলো দুপুর ১২টায় কিন্তু অনলাইনে লিংক আসতে ২টা বেজে যায়। অনেক সময় সারাদিনও কেটে যায় মামলার শুনানির জন্য বসে থাকতে থাকতে। এছাড়া মামলার অন্যান্য কাগজপত্র নিতে আদালতেই যেতে হচ্ছে। বেইলবন্ড, ওকালতনামা, মামলার নকলসহ অনেক কিছু অনলাইনে করা যাচ্ছে না। আবার দেখা যায় ইমেইলে মামলার কপি দেওয়ার পরে হার্ড কপি দিতে আদালতেই হচ্ছে। ফলে আইনজীবীরা পুরপুরিভাবে অনলাইনকে কাজে লাগাতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সিনিয়র আইনজীবী আছেন, অনলাইন ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যার ফলে তাদেরও পড়তে হচ্ছে বিপাকে। অনেক সময় ইমেইলে বার্তা পাঠানোর পর তা ঠিকমতো গেছে কিনা সেই বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে মেসেজ আসে না। যার ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয় কখন কি ঘটে।’
আদালতে কয়েকজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করা শর্তে সারাবাংলা জানান, আমাদের কিছু কারিগরি ত্রুটির কারণে অনেক সময় ইমেইলে বার্তা রিপ্লাই পাঠাতে দেরি হয়। আবার দেখা যায় আইনজীবীরা একই ইমেইল কয়েকবার পাঠিয়েছে যার ফলে আমাদের অনেক কাজের চাপ বেড়ে যায়। সেজন্য মামলার শুনানির ডেট, ইমেইল লিংকসহ অন্যান্য কাজের তারিখ দিতে সময় লাগে। এছাড়াও অনেক আইনজীবী আছেন যারা ঠিকমত না বুঝে অনলাইন চলে আসেন! ফলে ওনাদের জন্য অন্যদেরও সমস্যার মুখে পড়তে হয়।