Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু: স্ত্রী-শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা


২৯ জুন ২০২০ ২২:১৫

ঢাকা: মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে একই বাসায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে একমাত্র ছেলে পিয়াসের মতোই দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু মারা যান। এবার এই চাঞ্চল্যকর মৃত্যুতে নান্নুকে হত্যার অভিযোগ এনে তার স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা থানায় সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবী (৪৫) এবং শাশুড়ি মোসাম্মদ শান্তা পারভেজের বিরুদ্ধে নান্নুর বড়ভাই মো. নজরুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি করেন।

বিজ্ঞাপন

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে এর আগে গঠন করা গুলশান বিভাগ পুলিশের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, সিআইডি ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি তদন্ত কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে নান্নুর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।’

ওসি পারভেজ বলেন, ‘আগুনে পুড়ে নান্নুর মৃত্যুর পর স্ত্রী পল্লবী একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন থানায়। তবে আজ সাংবাদিক নান্নুর আগুনের পুড়ে যাওয়া ও মৃত্যুকে হত্যা বলে দাবি করে বড় ভাই নজরুল ইসলাম খোকন মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নান্নুর স্ত্রী ও শাশুাড়িকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু তার স্ত্রী শাহিনা হোসেন পল্লবীর সাথে আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার দশম তলায় বসবাস করতো। গত ১১ জুন রাত সাড়ে তিনটার সময় আমার ছোটভাই মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন সকাল আটটায় তিনি মারা যান।’

বিজ্ঞাপন

এজহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার সময় আমি নড়াইলের কলোরায় নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। আমি আমার মেজো ভগ্নিপতি আনসার হোসেনের কাছ থেকে নান্নুর অগ্নিদগ্ধের খবর পাই। এও জানতে পারি নান্নুর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাটি রহস্যজনক। ঘটনা সময় স্ত্রী ছাড়াও নান্নুর শাশুড়ি শান্তা পারভেজও ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। আমরা আরও জানতে পারি, নান্নু গত ১১ জুন রাত একটার দিকে বাসায় ফেরে। বাসায় ফেরার পর স্ত্রী পল্লবীর সাথে ঝগড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই বাসায় আগুন লাগে। নান্নু দগ্ধ হয়। নিজে পাইপ এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি আগুন নেভানোর চেষ্টা করে নাই এবং নান্নু নিজেই ১০ তলা থেকে হেঁটে নিচে নামে। সেখানে আশপাশের ফ্লাট মালিকরা নান্নুকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, তার স্ত্রী পল্লবী অনেক পরে হাসপাতাল থেকে জানান চিকিৎসাধীন অবস্থায় একদিন পর নান্নু মৃত্যুবরণ করে। আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলু ও ভাগ্নে সাজ্জাদ হোসেন টিপু একটি ভাড়া গাড়িতে ঢাকায় আসে। তারা হাসপাতালে যেতে চাইলে পল্লবী ও তার অফিসের জনৈক সিইও তাদের হাসপাতালে যেতে নিষেধ করেন। পরে তারা হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় যান।

মামলার এজাহারে নজরুল ইসলাম আরও বলেন, নান্নু মারা যাওয়ার পর আমাদের না জানিয়ে তার স্ত্রী এবং পল্লবী যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো সেই প্রতিষ্ঠানের সিইও পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি তার ব্যবহৃত একটি কালো রংয়ের পাজেরো গাড়িতে করে পল্লবীর গ্রামের বাড়িতে যায়। ওই সিইও’র সহযোগিতায় নান্নুর বিনা ময়নাতদন্তের লাশ পল্লবী তার বাড়ি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার ভাঙ্গুরা গ্রামে দাফন করেন।

এজাহার তিনি উল্লেখ করেন, আমার মেজো ভাই ইকবাল হোসেন বাবলুসহ আত্মীয়-স্বজনরা লাশ দেখতে চাইলে তাদের দেখতে দেওয়া হয়নি। আমি লোক মারফত আরও জানতে পারি, নান্নু হাসপাতালে থাকার সময় তার স্ত্রী পল্লবী মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ভোর চারটার সময় স্যুপ খাওয়ায় নান্নুকে। আর সেই স্যুপ পল্লবীর অফিসের জনৈক সিইও সাহেবের বাসা থেকে রান্না করে আনা বলে জানতে পেরেছি।

উল্লেখ্য, আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার দশম তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত শুক্রবার(১২ জুন) ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন নান্নু। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি অপমৃত্যু’র মামলা দায়ের করেন।

এর আগে মাত্র ছয় মাস আগে গত ২ জানুয়ারি ওই একই বাসায় বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাদের একমাত্র সন্তান মিউজিক ডিরেক্টর স্বপ্নীল আহমেদ পিয়াস (২৪) প্রাণ হারান। সে সময়ও ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু।

বিরুদ্ধে মামলা মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু স্ত্রী-শ্বাশুড়ির

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর