বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ ভিয়েতনামের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইটি), চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, অবকাঠামো ও পর্যটনসহ সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভিয়েতনাম।

২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে বলেও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সফররত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া ভিয়েতনামের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাম বিন মিন এবং পরিকল্পনা ও বিনিয়োগমন্ত্রী গুয়েন চিন ডাংসহ দুদেশের ব্যবসায়ীরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামীতে দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত হবে। চলতি বছর বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। তবে ২০২০ সাল নাগাদ এই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে।’

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের কাছে অনুকূরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখানে সামাজিক ন্যায্যাতাও সৃষ্টি হয়েছে।’

এ সময় তিনি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দরিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের রোল মডেল ও বাংলাদেশের উত্থান বিস্ময়কর বলেও মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম দুদেশই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রাম অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এ ছাড়া রফতানি প্রক্রিয়াকরণঞ্চল (ইপিজেড) রয়েছে। কর অবকাশসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়াসহ নানা বিনিয়োগ সুবিধা থাকছে।

বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ভিয়েতনাম ব্যবসায়ীদের কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেক্ট্রনিক্স ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ফোরামে সে দেশের ৫০টি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। অনুষ্ঠানে বেসরকারি পর্যায়ে দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়। ‘সী ফুড’ এবং ‘লেদার ও ফুটওয়্যার’ এই দুই খাতে পৃথকভাবে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতার আওতায় বাংলাদেশ থেকে এ সব খাতে পণ্য রফতানি এবং ভিয়েতনামের কারিগরি সহায়তা সম্প্রসারণ করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানশেষে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় এ পর্বে ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গুয়েন চি ডাং এবং শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী চাও কুয়োক হাং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম. আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ভিয়েতনামে রফতানি করে এবং ভিয়েতনাম থেকে ৪১২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রফতানি পণ্য হচ্ছে কৃষিজাত পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ঔষধ সামগ্রী।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই