করোনায় এডিপিতে ধাক্কা, বাস্তবায়ন হয়নি অর্ধেক কাজও
১ জুলাই ২০২০ ০৮:১৯
ঢাকা: শেষ হতে চলেছে ২০১৯-২০ অর্থবছর। কিন্তু ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) বাস্তবায়ন হার এখনও ৫০ শতাংশের নিচেই রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ধাক্কায় তছনছ হয়ে গেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও। গত ১১ মাসে (জুলাই-মে) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। আর এতে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ১ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে চললেও এখনও ৮৫ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডি’র প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রেলপথ মন্ত্রালয়ের ৪০টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। কিন্তু গত মে মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত ১১ মাসে খরচ হয়েছে ৮১ কোটি ২১ লাখ টাকা; বাস্তবায়নের হার ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। অভ্যন্তরীর্ণ সম্পদ বিভাগের ছয়টি প্রকল্পে বরাদ্দ ২৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন হার ছয় দশমিক ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের দুটি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। এডিপি বাস্তবায়ন হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সুরক্ষা সেবা বিভাগের ১৯ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৫৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এডিপি বাস্তবায়নে হার দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
গত মে মাস পর্যন্ত আরএডিপি বাস্তবায়নে ৫০ শতাংশের নিচে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (থোক বরাদ্দসহ) ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৪৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, জননিরপত্তা বিভাগ ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আইন ও বিচার বিভাগ ২৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪২ দশমিক ৯১ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৪১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, আইএমইডি ৩৮ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, পরিকল্পনা বিভাগ ৪৯ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত কয়েকমাস উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ঠিক মতো কাজ হয়নি। ফলে স্বাভাবিক কারণেই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হবে। কিন্তু অর্থবছর শেষে কত কম হবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এই জুন মাসে কিছু কাজ হচ্ছে। তাছাড়া আগে কিছু কাজ হলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ বাকি রয়েছে। এই বিলগুলো দেওয়া হলে এডিপি বাস্তবায়নের হার কিছুটা বাড়বে।
আইএমইডি’র প্রতিবেদন আরও দেখা গেছে গত চার বছরের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৬২ দশমিক ৮১ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৬৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত গত ১১ মাসে সর্বোচ্চ ৮৪ দশমিক ৬১ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৮০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৭০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭৯ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৭২ দশমিক ১২ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছর ৫০ শতাংশ কাজ অগ্রগতি প্রতিবেদন আইএমইডি এডিপি করোনা বাস্তবায়ন