Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভবিষ্যতের স্বপ্ন অর্জনে তরুণরা মূল যোদ্ধা’


১ জুলাই ২০২০ ১৪:৩৫

ঢাকা: ‘আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন অর্জনে তরুণরাই মূল যোদ্ধা’ বলে অভিমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ ওয়েবিনারের অষ্টম পর্বে অংশ নেওয়া আলোচকরা।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি প্রচারিত ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ওয়েবিনারের অষ্টম পর্বে বক্তারা এ অভিমত জানান।

‘তরুণদের শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি: আগামীর কৌশল নির্ধারণ’ শিরোনামে বরাবরের মতো রাত ৮টায় অনুষ্ঠানের অষ্টম পর্ব প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/awamileague.1949 ও অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে https://www.youtube.com/user/myalbd ছাড়াও সারাবাংলা.নেট, বিজয় টিভি, ইত্তেফাক, সমকাল, যুগান্তর, ভোরের কাগজ, বিডিনিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, জাগো নিউজ২৪ ও সময় টিভি ও বার্তা২৪-এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর ও গুরুকুল অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম-এর প্রতিষ্ঠাতা সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর।

আলোচনার শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের ক্লাস চালু করেছি। যেখানে সাধারণ শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা সমান তালে চলছে। এছাড়া অনলাইনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষাথীদের ক্লাস নিচ্ছেন। আমরা দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ করে দেখেছি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে পারছি। বাকি শিক্ষার্থীদের জন্য যাদের কাছে অনলাইনে পৌঁছাতে পারছি না তদের কাছে পৌঁছাতে ৩৩৩৬ নাম্বারে মোবাইল ফোন কলের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, কমিউনিটি রেডিও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর কিভাবে পৌঁছানো যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি আগামি নভম্বরের মধ্যে বার্ষিক সিলেবাসগুলো মোটামুটি শেষ করে নিতে পারবো। অনুকূল পরিবেশ শুরু হলে এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারে সবসময় তরুণদেরকে গুরুত্ব দিয়েছি। শেখ হাসিনা এই তরুণদের যুক্ত করেছেন আমাদের স্বপ্নের সঙ্গে, জাতীয় স্বপ্নের সঙ্গে, এই জাতীয় স্বপ্ন অর্জনের পথে তরুণরাই আমাদের ভবিষৎ, তরুণরাই হচ্ছে মূল যোদ্ধা।’ তরুণদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও দক্ষতার শিক্ষার ওপরও জোর দেন তিনি।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারাবিশ্বের মতো আমাদের যুব সম্প্রদায় যারা বিভিন্ন কর্মস্থানে আছেন তারা অনেকেই আংশিক বা পুরোপুরি বেকার হয়ে যাবে। এই হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যারা গ্রামে চলে গেছেন বা যাবেন বলে ভাবছেন তাদের সেখানেই আত্মকর্মসংস্থান স্মৃষ্টির জন্য এবং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের জন্য লোনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে লোনের ক্ষেত্রে যে ইন্টারেস্ট দিতে হতো আমরা সেটা অর্ধেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছি। এই মুজিব বর্ষে কেউ যাতে বেকার না থেকে সেই উপলক্ষে কর্মসংস্থান ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’ নামে একটি প্রকল্প চালুর ব্যবস্থা করেছি- যেখানে নিম্নে ২০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সারাদেশে বেকার হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, আর সে হিসেবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। আমাদের টার্গেট রয়েছে আগামি ৩ বছরের মধ্যে ১২ লাখ দক্ষ যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল যুগের সুফল হিসেবে আমরা এখন অনলাইনে আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে হাত তালির চিন্তা বাদ দিয়ে আলোচনা করতে পারছি, এতে আমাদের মনজগতের একটা পরিবর্তন এসেছে। তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো এখন আগের থেকে অনেক শক্তিশালী, ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সেটা আজ বাস্তবতা। আমরা এখন ঘরে বসে থেকেই মন্ত্রণালয়ের কাজ করছি, অনলাইনে শিক্ষকরা ক্লাশ নিচ্ছেন, জরুরি মিটিং করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো সংবিধানে বিদ্যুৎ মৌলিক অধিকার বলে উল্লেখ নাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সংবিধানে বিদ্যুতকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে সন্নিবেশিত করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন, যার ফলে তথ্য প্রযুক্তিতে আমরা এগিয়ে যেতে পেরেছি।’

দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার বিভাষ বাড়ৈ বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো সঠিক অবস্থানে আছে। সবার কাছে এখন নিরাপত্তা আগে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মন্ত্রণালয় এখন সঠিক অবস্থানে আছে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। হয়তো বাজে সিচুয়েশন বাড়লে স্বাভাবিকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারবে না। দীর্ঘ হলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে শিক্ষা ব্যবস্থা বেশি স্থিতিশীল রয়েছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছি না, যদি মহামারী দীর্ঘ হয় সে ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘আমাদের শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে কাজ করছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমরা দেখতে পেলাম অনলাইন শিক্ষার যে কয়টি পদ্ধতি আছে, প্রত্যেকটি পদ্ধতিতে সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এটি ভালো উদ্যোগ। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শতভাগ পার্টিসিপেন্ট বা ক্লাস পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবার কাছে মোবাইল আছে, ক্লাস শুরুর পূর্বে প্রত্যোক শিক্ষার্থীদের ফোনে যদি মেসেজ বা ভয়েস মেসেজ দেওয়া যায় তাইলে ছাত্রছাত্রীদের এনগেইজমেন্ট আরও বেশি পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি। যেমন আজকে তোমাদের ক্লাস, এসাইনমেন্ট। এতে করে শিক্ষার্থীরা আগে থেকে প্রস্তুত থাকলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে, ২১ বছরের মধ্যেই আমাদের সকল ছাত্রছাত্রীদের মাঠ ছেড়ে দিতে হবে। এর জন্য লেগো কনসেপট নিয়ে কাজ করতে হবে। মার্কেটের সঙ্গে আর ডিমান্ডের সঙ্গে মিল রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ক্লাস কনটেন্ট তৈরির ব্যপারে। এক্সপার্ট বেইজ কন্টেন্ট, ক্লাউড বেইজ কনটেন্ট এবং এর চেয়ে ভালো হয় কোলাবোরেটিং বেইজ কনটেন্ট নিয়ে কাজ করা যায় অনলাইন শিক্ষার ব্যাপারে। ন্যারো ব্যান্ড ইউজ করে, অথবা ছোট ডিভাইসে এফ এম রেডিওর মাধ্যমে ঘরে ঘরে কন্টেন্ট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’

গুরুকুল অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠাতা সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর বলেন, ‘এই সময়ে, একেবারে অপ্রস্তুতভাবে আমাদের সরকার যা করেছে তা খুবই প্রসংশার দাবিদার। প্রতিটি স্কুল বা কলেজকে আলাদাভাবে অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে। তারাই ছাত্র-ছাত্রীদের কনটেন্ট ডেলিভারি দেবে। আমাদের শিক্ষকদের জন্য আদর্শ শিক্ষা উপকরণ দিলে ভালো হবে। আদর্শ ক্লাসরুম হলে ক্লাস নিতেও সুবিধা। আমাদের অনলাইনে এই শিক্ষা উপকরণগুলো সরবরাহ করতে হবে, আমাদের ১ লাখ ক্লাস সারাদেশে কিভাবে নেওয়া যায় সেভাবে চিন্তা করতে হবে নীতি নির্ধারকদের। এখন উপযোগী নীতিমালা তৈরি করে কিভাবে এই অনলাইন ক্লাস নেওয়া যায় সেভাবে কাজ করতে হবে সবার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যারা নীতিনির্ধারক আছেন তাদের নিড অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে আরেকটুকু গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। কারিগরিতে ৩৪ প্লাস ট্রেড রান চালু রয়েছে কারিগরিতে, কিন্তু কার্জকর আছে তিনি থেকে চারটি, কারিগরিভাবে বাকিগুলো নিয়েও কাজ করা দরকার।’

প্রতিটি ইউনিয়নে ফাইবার অফটিকাল ফাইবার আছে উল্লেখ করে বলেন, ‘কনটেন্ট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এইসব ইউনিয়ন পরিষদের হেল্প নিয়ে এবং লোকাল ক্যাবল অপারেটরদের হেল্প নিয়ে একযোগে কাজ করে বাড়ি বাড়ি শিক্ষার্থীদের কম ব্যান্ডউইথ দিয়ে কন্টেন্ট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে দর্শকরা সরাসরি ও দলের ফেসবুক পেজের পোস্টেও প্রশ্ন করার সুযোগ পান। দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের ভিত্তিতেই এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়।

করোনাকালীন সংকট নিয়ে বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর আটটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবশেষ পর্বটি প্রচারিত হয়েছে গত ৩০ জুন।

আওয়ামী লীগ টপ নিউজ তরুণ মন্ত্রী শিক্ষা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর