ঢাকা: জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাখান করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বুধবার (১ জুলাই) জাতীয় সংসদের মূল গেটের সামনে সাংবাদিকদের কাছে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানান তারা।
সূচনা বক্তব্যে বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘গত একশ বছরে পৃথিবীতে এমন দুর্যোগে-মহামারি আমরা দেখিনি। এই মহামারির মধ্যে গতকাল আমাদের বাজেট পাস হয়েছে। এই বাজেট জনগণকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য। আমরা যাতে সংসদে এই বাজেট নিয়ে কথা বলতে না পারি, সমালোচনা করতে না পারি, সে কারণে মাত্র একদিনের জন্য সাধারণ বাজেট আলোচনা করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আলোচনাবিহীন বাজেট কখনো পাস হয়নি। জনগণের পক্ষ থেকে আজকে এই মহান সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা এই বাজেট প্রত্যাখান করছি।’
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্য হিসেবে আমাকে খুব অল্প সময়ের জন্য বাজেট বক্তৃতায় কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় এক পর্যায়ে স্পিকার আমার মাইক বন্ধ করে দেন।’
‘আমরা বাজেট ঘোষণার আগে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই বাজেট অধিবেশন ভার্চুয়াল করার জন্য। কিন্তু সেটা করা হয়নি। বাজেট নিয়ে কথা বলার সুযোগ থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা শুধু এটুকু বলতে চাই, যারা মহাজোটের শরিক তারাই বিরোধী দলে অংশগ্রহণ করছে। তার ফলে জনগণের যে সংকট, সেটি সত্যিকার অর্থে সংসদে প্রতিফলিত হচ্ছে না’— বলেন হারুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘এই সংকটের মধ্যে যারা জাতিকে পরামর্শ দিতে চায় তাদেরকে সরকার তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। আমরা সংসদে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছি এবং গোটা স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের কথা বলেছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অতি দ্রুত করোনা মোকাবিলার জন্য আমাদের রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি এবং গতকাল যে অপ্রত্যাশিত এবং অকল্পনীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা প্রত্যাখ্যান করছি।’
লিখিত বক্তব্যে বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বাজেট অধিবেশন সংসদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। এই অধিবেশনে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে বাজেটের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ জাতির স্বার্থেই খুব জরুরি। করোনাকালীন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেট অধিবেশন অতি সংক্ষিপ্ত করতে চেয়েছে সরকার। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে এই অধিবেশন ডিজিটাল বা ভার্চুয়ালি করার প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ই জুন অনির্ধারিতভাবে ২৩ জুন পর্যন্ত বর্তমান অধিবেশন মূলতবি করে মাত্র এক দিন (২৩ জুন) বাজেটের সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে। এটা অকল্পনীয়। আমাদের বিশ্বাস করোনার মতো ভয়ঙ্কর একটা সংকটে যে যাচ্ছেতাই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার সমালোচনা এড়ানোর জন্যই অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি করে শেষ করতে চেয়েছে সরকার।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এই দেশ স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়েছে। সেটার কারণে অর্থনৈতিক সংকটকে মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে, কিন্তু দেশের চরম অভ্যন্তরীণ সংকট এবং একই সাথে সারা পৃথিবীর সংকট মিলিয়ে এবারের মতো পরিস্থিতি এই জাতির ইতিহাসে আর আসেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে এমনিতেই চরম লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। করোনা আসার আগেই পুরো ২০১৯ সাল জুড়ে আমরা দেখেছি শুধুমাত্র রেমিট্যান্স ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির আর সবগুলো সূচক কমে যাচ্ছিল। এমনিতেই ভেঙেপড়া অর্থনীতির সাথে করোনার অভিঘাত যুক্ত হবার ফল হবে ভয়ঙ্কর।’
‘এই পরিস্থিতিতে যে অসাধারণ সৃজনশীলতা এবং আন্তরিকতা নিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করা অত্যাবশ্যক ছিল, বলা বাহুল্য তার কিছুই হয়নি। বরং সব সময়ের মতো একটা প্রাক্কলিত জিডিপির ভিত্তিতে ব্যয়ের খাতগুলোর বরাদ্দ আনুপাতিকভাবে বাড়িয়ে যে বাজেট তৈরি করা হয়েছে সেটাকে প্রতিবারের মতো গতানুগতিকও বলা যায় না’— বলেন রুমিন ফারহানা।
তিনি বলেন, ‘এই বাজেট করোনার সময় স্বাস্থ্য সংকটে পড়া মানুষের নাভিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবার বাজেট, এই বাজেট করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি অনাহারী মানুষকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ঠেলে দেয়ার বাজেট, এই বাজেট কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলার বাজেট, এই বাজেট দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার না করে আরও গভীর মন্দায় ফেলে দেওয়ার বাজেট, এই বাজেট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে ফেলার বাজেট। এই বাজেট আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোশররফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম ও বিএনপির চেয়াপারসনের প্রেসউইং সদস্য শায়রুল কবির খান।