করোনায় চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকবে বন্দর: নৌ প্রতিমন্ত্রী
১ জুলাই ২০২০ ১৮:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে অথবা উপসর্গ থাকলে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বুধবার (১ জুলাই) সকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে ৫০ শয্যার করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং নবর্ণির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময় চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বন্দরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে আপনাদের সাহসী পদক্ষেপের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আপনারা বন্দরকে সচল রেখেছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
করোনায় আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে মৃত্যুহার অনেক কম মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অনেক দুর্বলতা আছে। কিন্তু যেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেক উন্নত, যেসব দেশে উন্নত চিকিৎসা পেতে এদেশের ধনাঢ্য মানুষেরা ছুটে যান, তাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাও আজ অনেক অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। পৃথিবীর যে দেশ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে অনেক গর্ব করে, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সীমাবদ্ধতা মধ্যেও সরকারের সাহসী ব্যবস্থাপনার কারণে আমরা আক্রান্ত হয়েছি সত্য, কিন্তু পরাজিত হয়নি। আমেরিকার মতো দেশে মৃত্যুর হার পাঁচ শতাংশের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে মৃত্যুহার এক শতাংশের সামান্য বেশি। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের সাহস এবং সরকারের সাহসী ব্যবস্থাপনার কারণে।’
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি ল্যাব দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে গেছি। বিস্ময়কর নেতৃত্বে এ সংকট মোকাবিলা করছেন দেশের মানুষ। কোভিড-১৯ আমাদের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা দিয়েছে তা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চেষ্টা চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফ লাইন। চট্টগ্রামের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায়ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে চট্টগ্রামবাসীর পাশে থাকবে বন্দর।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনাল, পিসিটিসহ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাই বন্দরের জন্য শুধু উদ্ধারকারী জাহাজ নয়, হেলিকপ্টার কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে। ১০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের সেরা ১০০ কনটেইনার হ্যান্ডলিংকারী বন্দরের তালিকায় ৬৪তম অবস্থানে এসেছে। আমরা চাই ৩০-৫০তম অবস্থানের মধ্যে চলে আসতে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে নৌ প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি লঞ্চ দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, বন্দর হাসপাতালে ২৫টি আইসোলেশন বেড এবং ২৫টি কোভিড রোগী চিকিৎসা বেড দিয়ে করোনা ইউনিটের যাত্রা হয়েছে। খুব শিঘ্রই একটি আইসিইউ ওয়ার্ড করার পরিকল্পনা তাদের আছে।
করোনার চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যে ১৩ জন ডাক্তার, ৩৬ জন নার্সসহ মোট ১৫৯ জন চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্লোমিটার, ৬টি হাই ফ্লোন নেজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে।
সচিব জানান, ইতোমধ্যে বন্দরের কর্মচারীসহ বন্দর পরিবারের ১৬৬ জন সদস্য করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। পাঁচশ’রও বেশি হোম কোয়ারেনটাইনে বা আইসোলেশনে আছেন। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।