গণপূর্তের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১৬টি ফ্ল্যাট-প্লটের মালিক
৪ জুলাই ২০২০ ১৬:১২
ঢাকা: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী তিনি। পদবি মাঠ কর্মী। অথচ রাজধানী ঢাকা শহরে তার রয়েছে ১৬টি ফ্ল্যাট-প্লট। বিলাসবহুল গাড়িও আছে তার। এ ছাড়া সরকারি জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার নাম করে অন্তত ৪২ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা। অভিযোগ পেয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী মোস্তফা কামাল শাহীনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুরের চিকিৎসক দম্পতি হোসনে আরা ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম ২০১৪ সালে রূপনগর দুয়ারী পাড়ার সেকশন ৮ এর ‘খ’ ব্লকের ২নং প্লটটি বরাদ্দ পেতে ২৮ লাখ টাকা দেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর এলাকার দায়িত্বে থাকা মোস্তফা কামাল শাহীন ও তার সহযোগী জামাল মাস্টারকে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ওই প্লটে ঘরও তুলেছিলেন তারা। কিন্তু গতবছর সরকারিভাবে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে যায় হোসনে আরা-আমিনুল দম্পতির স্বপ্ন।
একই অবস্থা এ এলাকার মোহাম্মদ মনির, খোরশেদ আলম, ইসমাইল কাজী, আমিনুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, এস এম নেকবার আলী, আব্বাস আলী, শমসের আলী জিয়াসহ ৪২ জন মানুষের। তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে শাহীন গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।
৪২ জন ভুক্তভোগীর তালিকা সারাবাংলার হাতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা যে টাকা দিয়েছেন তার রশিদও সরবরাহ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার দীর্ঘদিনেও তারা প্লট পাননি। উপায় না পেয়ে শাহীনের দ্বারস্থ হয়েছেন বহুবার। শাহীন প্রতিবারই আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, আপনারা প্লট পাবেন। কিন্তু গত বছর উচ্ছেদের পর ভেঙে যায় সবার স্বপ্ন। এরপর শাহীনের কাছে গেলে শাহীন উল্টাপাল্টা কথা বলতে থাকেন। টাকা ফেরত চাইলে শাহীন বলেছেন, কীসের টাকা? আপনারা কেউ আমার কাছে টাকা পাবেন না।
ভুক্তভোগীদের দাবি, প্লট দেওয়ার কথা বলে শাহীন টাকা নিয়েছে। এখন সেই প্লট দিতে না পারলে দ্বিগুণ ও তিনগুণ হারে টাকা ফেরত দিতে হবে। শাহীন তো সামান্য কর্মচারী। ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস শাহীনের পেছনে আরও কেউ আছে। তার পেছনে আরও কারা আছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিরপুরের দুয়ারী পাড়ায় ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকে তিন নম্বর সড়কে একটি প্লট, একই এলাকায় ৪০ নম্বর সড়কে ১২ নম্বর প্লট, কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটের ডি ব্লকে ২০ নম্বর সড়কের ১/১ প্লট, কক্সবাজার হাউজিং স্টেটের চার নম্বর ভবনে একটি ফ্ল্যাট, তার আপন ভাই আরিফ হোসেনের নামে আট নম্বর সেকশনে ১৬ নম্বর সড়কের ৯ নং প্লটসহ নামে বেনামে অন্তত ১৬টি প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে শাহীনের।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু ঢাকাতেই বাড়ি-গাড়ি নয় বরং কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে দুই কোটি টাকা খরচ করে একটি ডুপ্লেক্স বাড়িও বানিয়েছেন শাহীন। একটি প্রিমিয়ার প্রাডো গাড়িও রয়েছে তার।
এ সব বিষয়ে জানতে মোস্তফা কামাল শাহীনের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
কথিত রয়েছে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় ওই শাহীন। শাহীনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যতা পেয়েছে দুদক।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (এডি) সাইফুজ্জামান নন্দন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপূর্তের মাঠ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহীনের নামে অভিযোগ আসার পর আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্ত শুরুর পর জানতে পারি তার নামে দুদকের ঢাকা-১ কার্যালয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। এরপর আমি তদন্ত বন্ধ করে দিই। কারণ কোনো অভিযোগ এলে তা এক জায়গাতেই তদন্ত করার নিয়ম।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয় সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, শাহীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। খুব শিগগিরই তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এদিকে শাহীনসহ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুই কর্মচারীর ফাইল তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে ফাইল তলব বিষয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গণপূর্ত অধিদফতর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন মোস্তফা কামাল শাহীন