Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মহামারিকেও মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ বানিয়েছে সরকার’


৪ জুলাই ২০২০ ১৫:৩০

ফাইল ফটো: রুহুল কবীর রিজভী

ঢাকা: করোনা টেস্টের ফি নির্ধারণের মধ্য দিয়ে সরকার বৈশ্বিক মহামারিকেও মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (০৪ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্র্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের নেতা- মন্ত্রীরা প্রায়শই দাবি করেন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ নাকি রোল মডেল। কীসের জন্য বাংলাদেশ মডেল? স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির জন্য সারাবিশ্বের কাছে রুল মডেল।’

বিজ্ঞাপন

‘কারণ এরা যেমন ‘স্বর্ণের মেডেল’ থেকে স্বর্ণ চুরি করে আবার করোনায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণের চাল চুরি ও নকল মাস্কের ব্যবসাও করে। এখন প্রাণঘাতী করোনা মহামারির ভাইরাস পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকট চরমে। মানুষের ঘরে খাবার নেই। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অসহায়ভাবে পথে-ঘাটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষাও হচ্ছে নামমাত্র। এরমধ্যে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’

রিজভী বলেন, ‘মহামারির চিকিৎসা কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয় না। করোনা মহামারি চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বিশ্বের কোথাও সরকারিভাবে কোভিড টেস্টে অর্থ নেওয়া হয় না। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কোভিড টেস্টের রেকর্ড দক্ষিণ কোরিয়ায়। তারা দিনে ১ লাখের উপর মানুষের কোভিড টেস্ট করেছে। এমনকি এন্টিবডি টেস্টও করেছে। তাদের সমস্ত টেস্টই বিনামূল্যে করা হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরীব দেশ আফগানিস্থানে কোভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশ পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোয় কোভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়। আমাদের প্রতিবেশি কোন দেশই টেস্ট করাতে ফি নেয় না। উপরন্তু প্রায় প্রতিটা দেশের সরকার স্বেচ্ছাসেবীদের ঘরে ঘরে পাঠাচ্ছে নমুনা সংগ্রহে। টেস্ট করাতে জনগণকে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’

‘আর আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এই মহামারিকেও বানিয়েছে মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ। এরা কতটা অমানবিক তার নিকৃষ্টতম প্রমাণ এই ফি ধার্য। যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং সব বিশেষজ্ঞ করোনা সংক্রমণ রোধে টেস্ট বৃদ্ধি করাকেই প্রধান অবলম্বন বলছেন, সেখানে টেস্ট করাতে ফি ধার্য করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা উপসর্গ থাকার পরও করোনা পরীক্ষা করাতে পারবে না। তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন করা যাবে না। এতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকবে। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘতর হবে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকার নির্ধারিত সাড়ে ৩ হাজার টাকায় কোভিড টেস্ট করছে না। যে যার মতো ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই করছে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমস্ত মনোযোগ দুর্নীতি আর লুটপাটে। একটি হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের খাবার-দাবারের বিল ২০ কোটি টাকা দেখালেও অভিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন কোনো দুর্নীতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে এই ২০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায়নি।’

রিজভী বলেন, ‘সরকার চারিদিক থেকেই শুধু স্বল্প আয়ের মানুষেরই পকেটে হাত দিচ্ছে। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ। এর ওপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানির মূল্য বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা।  এর সাথে করোনা টেষ্টের ফি ২০০ টাকা ধার্য করে সরকার এখন ভ্যাম্পেয়ারের ন্যায় রক্তচোষার ভূমিকায়।’

তিনি বলেন, ‘কোনো নাগরিক যদি টাকার অভাবে করোনাভাইরাস টেস্ট করতে না পেরে নিজ দেহে সেটি বহন করে বেড়ান, তাহলে তিনি শুধু নিজেরই ক্ষতি করছেন তা না, এতে সকলের ক্ষতি হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে— রিজভী

রুহুল কবির রিজভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর