তদবিরে নয়, বদলি হবে নিয়মতান্ত্রিক: আইজিপি
৪ জুলাই ২০২০ ২১:০৫
ঢাকা: পুলিশ বাহিনীতে বদলির ‘তদবির কালচার’কে চিরতরে বিদায় করতে চান বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এ কারণে বাস্তবসম্মত বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে চান তিনি।
ইতোমধ্যেই গতানুগতিক ধারা পাল্টে বদলিতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। আইজিপি মনে করেন, অধিকাংশ পুলিশ অফিসার এবং সদস্য সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে যেতে চান না। এ সংকট নিরসনে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানান আইজিপি। এছাড়া, বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশের চাকরিকে আকর্ষণীয় করতে বিভাগীয় শহরেও মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
শনিবার (৪ জুলাই) বিকেলে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আয়োজিত বিশেষ অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইজিপি এসব উদ্যোগের কথা জানান।
আইজিপি বলেন, ‘চলমান করোনাকালের গত তিন মাসে পুলিশ বদলে গিয়েছে। পুলিশ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। করোনায় পুলিশ জনগণের পাশে গিয়ে যেভাবে সেবা দিয়েছে, এর বেশিরভাগই পুলিশের কাজ ছিল না। কিন্তু পুলিশ এ কাজটি করেছে একান্তই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পুলিশ এত সম্মান, এত মর্যাদা আর কখনো পায়নি, গত তিন মাসে যা পেয়েছে। এখন জনগণ পুলিশের পক্ষে কথা বলছে, পুলিশের জন্য লিখছে, যারা কথায় কথায় পুলিশের সমালোচনা করতেন, তারাও আজ পুলিশের পক্ষে হৃদয় উজাড় করে বলছেন, পুলিশকে সমর্থন করেছেন। যে সম্মান, মর্যাদা আমরা গত তিন মাসে পেয়েছি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের সাথে থাকতে হয়, তাদের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ভালোবাসতে হয়।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘পুলিশে কোনো দুর্নীতিবাজের ঠাঁই নেই। মাদকের সাথে কোন পুলিশ সদস্যের সম্পর্ক থাকবে না। পুলিশকে হতে হবে মাদকমুক্ত। নিষ্ঠুরতা বন্ধ করে পুলিশের আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে পিসিআর মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আবাসন ব্যবস্থা এবং ডিউটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে পুলিশ সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমেছে এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে।’
আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী ৪৬ জন শহীদ পুলিশ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান। আইজিপি এসব পরিবারের অংশ হিসেবে সুখে-দুঃখে তাদের সাথে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিএমপির সব থানার অফিসার ইনচার্জসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।