Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশুলিয়ায় বাড়ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা স্থানীয়দের


৫ জুলাই ২০২০ ০৮:১২

আশুলিয়া: ঢাকার নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও করোনার সুযোগ নিয়ে ফের গ্যাসের পুনঃসংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নিম্নমানের পাইপ দিয়ে অবৈধ সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসলাইন ফেটে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করেছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার খেজুর বাগানের স্বপ্নপুরী এলাকায় নারী শ্রমিক হোস্টেলের সামনে শতাধিক বাসা-বাড়িতে রাতের আঁধারে স্থানীয় প্রভাবশালী আফিয়া বেগম, সেলিম মোল্লা ও তিতাস গ্যাস অফিসের কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন। এসব সংযোগের বিনিময়ে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, আশুলিয়া ইউনিয়নের খেজুর বাগান এলাকাজুড়ে প্রত্যেকটি পরিবার থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেন আফিয়া বেগম, সেলিম মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা। এসব লাইন থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার করে টাকা উত্তোলন করেন আফিয়া বেগমের সহযোগী সেলিম মোল্লা ও দেলোয়ার হোসেন।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন সেলিম মোল্লা। তার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য সারাবাংলার কাছে রয়েছে।

জানা গেছে, ওই এলাকায় আফিয়া বেগমেরও একাধিক বাড়ি রয়েছে। সেসব বাড়িতে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। খেজুর বাগানের স্বপ্নপুরী এলাকার নারী শ্রমিক হোস্টেলের মোড় থেকে গ্যাস লাইনের মূল পয়েন্ট থেকে এ অবৈধ সংযোগ দেন তিনি। এ বিষয়ে আফিয়া বেগমের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন শুনে ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।

বিজ্ঞাপন

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের (সাভার শাখা) তথ্য মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭ হাজার ১৬০ টাকা ব্যয়ে সাভার ও আশুলিয়ার ২২১টি স্পটে প্রায় ৬২টি অভিযান পরিচালনা করে সাভার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এসব অভিযানে প্রায় ১৯৮ কিলোমিটার বিভিন্ন সাইজের ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮০টি চোরাই গ্যাস সঞ্চালনের পাইপ অপসারণ করা হয়। জব্দ করা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৫টি বার্নার। একই সাথে ২ হাজার ৯২০ জনকে আসামি করে করা হয় ১০টি মামলা। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয় ৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে করোনার কারণে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান বন্ধ থাকায় পুনঃসংযোগ দিয়ে আবার লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

আশুলিয়ার সরকার মার্কেট এলাকার বৈধ গ্যাসলাইন ব্যবহারকারী ফিরোজ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন থাকা অবৈধ গ্যাস সংযোগগুলো পুনঃসংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের প্রেসার কমেছে প্রায় ৫ গুণ। এখন সারা দিনে কেবল একবার গ্যাস পাচ্ছি। তাও আবার ভোরে। এ সময়ই সারা দিনের রান্নার কাজ শেষ করতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘আমাদের এই এলাকা শিল্প অধ্যুষিত। আমরা বাসা ভাড়াকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছি। লাখ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছি। এখানে পোশাক শ্রমিকরা গ্যাস না থাকলে বাড়ি ভাড়া নিতে চায় না। মাসের পর মাস বাড়ি খালি থাকে। আমরা ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারি না। তাই বৈধ-অবৈধ না দেখে অনেক বাড়িওয়ালা গ্যাসের সংযোগ নিতে বাধ্য হয়।’

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে মাটির সামান্য নিচ দিয়েই বিপজ্জনকভাবে বাসা-বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংযোগের লাইন।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাভার শাখার উপ-ব্যবস্থাপক ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযানের সমন্বয়কারী আব্দুল মান্নান পুনঃসংযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘অবৈধ কিছু পুণঃসংযোগের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আমরা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাসহ তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করবো।’

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মো. সায়েম বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতা পেলে খুব দ্রুতই এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ