Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরীক্ষায় গাফিলতি, পেশা ছাড়ছেন হাজারও শিক্ষানবিশ আইনজীবী


৫ জুলাই ২০২০ ১০:১০

ঢাকা: শিক্ষানবিশ আইনজীবীর প্রধান লক্ষ্য থাকে পড়ালেখা শেষ করে অ্যাডভোকেট হওয়া। সেই স্বপ্নপূরণে তাকে কয়েকধাপে বসতে হয় পরীক্ষায়। কিন্তু সেসব নিবন্ধন পরীক্ষা সময় মতো না হওয়ায় অনেক শিক্ষানবিশ আইনজীবী আইন পেশা ছেড়ে বিকল্প দিকে যাচ্ছেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, নিবন্ধন পরীক্ষা দীর্ঘ সময় পরপর হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। পরীক্ষার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার নিম্ন আদালতের শিক্ষানবীশ আইনজীবী মঞ্জুরুল হক সারাবাংলাকে জানান, তিন বছর পর একবার নিবন্ধন পরীক্ষা পেয়েছিলাম, কিন্তু প্রথমবার অকৃতকার্য হই। পরে জানতে পারি পুনরায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে আবার তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে! তাই বাধ্য হয়ে আইন পেশা ছেড়ে একটি বেসরকারি চাকরিতে ঢুকেছি।

শিক্ষানবিশ আরেক আইনজীবী মুরাদ হোসেন জানান, আইন বিষয়ের উপর পড়ালেখা শেষ করার পর জানতে পারি নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে ২/৩ বছর সময় লাগে। পড়ালেখা শেষ হওয়ায় সাথে সাথে সংসারের বোঝা মাথায় এসে পড়ে। তাই এতো সময় ব্যয় করতে পারবো না বলে বাধ্য হয়ে আইনজীবীর হওয়া স্বপ্নকে চাপা দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমি একা নই, আমার মতো হাজারও শিক্ষানবিশ আইনজীবী আইন পেশা ছেড়ে দিয়েছে ঠিক সময়ে নিবন্ধন পরীক্ষা না হওয়ার কারণে। তিন বছরের মধ্যে পরীক্ষায় কৃতকার্য না হতে পারলেই আবার ৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।’

শিক্ষানবিশ এস এম মেহেদী হাসান জানান, প্রত্যেক পরিবারের আশা থাকে পড়ালেখা শেষ করে ছেলে/মেয়ে কিছু একটা করবে বা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আইন পেশায় সনদ পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। সেই সময়টা সবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে আইন পেশা ছেড়া যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ২০১৭ ও ২০২০ সালের পরীক্ষায় (প্রিলিমিনারি) উত্তীর্ণদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী।

তারা জানিয়েছেন, সারা দেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান আপিল বিভাগের ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে যে রায় দিয়েছে  তা কার্যকর করা হচ্ছে না। বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তকরণ কমিটি (এনরোলমেন্ট কমিটি) আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত। অথচ তারাই আপিল বিভাগের রায় মানছে না।

প্রতিবছর পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৭ সালের ২১ জুলাই এবং ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এখনো লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। দেশে এখন করনোভাইরাসের মহামারি চলছে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়তো সম্ভব নয়। পরীক্ষা নেওয়ার পরিবেশ না হলে এই ১২ হাজার ৮৭৮ শিক্ষার্থীকে আইনজীবী হিসেবে সনদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১১ তে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাধ্যতামূলক কার্যকারিতা রয়েছে। এছাড়াও অনুচ্ছেদ-১১২ অনুসারে উচ্চ আদালতের রায় মানতে সবাই বাধ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়ে মোট ১২টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ১২নং প্যারায় বলা হয় প্রতি ক্যালেন্ডার বছরে একবার করে আইনজীবী তালিকাভুক্ত করার কাজ সম্পন্ন করার জন্য এবং আরও কতিপয় নির্দেশ বার কাউন্সিলকে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই বেশকিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলেও নিয়মিত তালিকাভুক্তির বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে।’

এছাড়াও দি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাক্টিশনারস এন্ড বার কাউন্সিল রুলস ১৯৭২ এর চ্যাপ্টার ৬ (Enrolment of Advocate)  বিধি ৬০ অনুসারে একজন শিক্ষানবিশকে ৬ মাস জুনিয়রশিপ করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সঠিক সময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় অনেকে ৩ থেকে ৫ বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে জীবন অতিবাহিত করছে, যা আমাদের আইন পেশায় অত্যান্ত দুঃখজনক, বলেন এই আইনজীবী।

তবে শিক্ষানবিশদের যৌক্তিক দাবি হবে ‘যথা সময়ে ও যথাযথ ভাবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ প্রদান’ তাহলে সব বিজ্ঞ আইনজীবী তাদের দাবির সাথে একমত পোষণ করবে এবং বার কাউন্সিলও দ্রুত এগিয়ে আসবে বলেও আশা জানান তিনি।

শিক্ষানবিশ আইনজীবী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর