ওয়ারীতে প্রভাব দেখিয়ে চলছে গাড়ির ইন-আউট, জেরা সাধারণ মানুষকে
৫ জুলাই ২০২০ ১৭:৫১
ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারী। করোনাভাইরাসের রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকাটিতে শনিবার (৪ জুলাই) থেকে চলছে লকডাউন। রোববার (৫ জুলাই) হট কেক গলির সামনে যেতেই দেখা গেলো একটি প্রাইভেটকার (পুলিশ স্টিকার লাগানো) বেরিয়ে যাচ্ছে। ভেতরে একজন মাত্র যাত্রী। তবে তাকে পুলিশের পোশাকে দেখা যায়নি। স্বেচ্ছাসেবীরা শুধুমাত্র স্টিকার দেখেই গাড়িটি ছেড়ে দিলেন। আরেকটি সাদা পাজেরো জিপ এলে যাত্রীকে তেমন জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ওই এলাকায় ঢুকতে দিলেন। তবে দোকানের চাবি দিতে গিয়ে আর ঢুকতে পারছেন না এমন একজনকে পাওয়া গেল। এমনকি সাধারণ যে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে স্বেচ্ছাসেবীদের ব্যাপক জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। আর এটাকে স্বেচ্ছাসেবীদের স্বেচ্ছাচারিতা বলছেন স্থানীয়রা।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/1158641577854327
করোনার সংক্রমণ রোধে ২১ দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে রাজধানীর ওয়ারীকে। দ্বিতীয় দিন দুপুরেই সেখানে উপস্থিত থেকে এসব চিত্র দেখা গেল। নিয়ম অনুযায়ী, ওই এলাকা থেকে কারও প্রবেশ বা বের হওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীরা সাধারণের ওপর প্রভাব খাটাতে পারলেও দামি আর বিশেষ স্টিকার লাগানো গাড়ি দেখলেই তারা নির্বিঘ্নে ঢুকতে দিচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, ‘উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকে ছাড়া হচ্ছে না। যারা যাচ্ছেন বাইরে তাদের নাম এখানে লেখা থাকছে। ঢুকতে গেলেও নাম চেক করে ঢুকানো হচ্ছে।’ ‘কিন্তু কেন পুলিশ স্টিকারের প্রাইভেটকার কোনো জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই বের হয়ে গেলো? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তারা।
দুপুরে ওয়ারী স্ট্রিটের একজন ঢুকতে গিয়ে জানান, তিনি যখন সকাল নয়টার দিকে বের হন তখন কেউ নাম লেখেনি। এখন ঢুকতে যেতেই বলছে, নাম না থাকলে ঢোকা যাবে না।
ওয়ারীর চারদিকে ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার ১৭টি পয়েন্টে বন্ধ করা হয়েছে। ভেতরে স্বেচ্ছাসেবীরা চলাফেরা করছেন। বিভিন্ন বন্ধ করা পয়েন্টে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। জরুরি চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়েছে হট কেক গলি এবং ওয়ারী থানার পাশে র্যানকিন স্ট্রিট। কিন্তু দুটি প্রবেশ পথে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
হট কেক গলি থেকে সামান্য এগোলেই কন্ট্রোল রুম। তবে সেখানে কল করে কেউ সেবা নিচ্ছেন এমনটা দেখা গেলো না। প্রায় এক লাখ বাসিন্দার ওয়ারীর অনেকেই লকডাউনের খবরে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় বাজার করে রেখেছিলেন বলে জানা গেছে।
র্যাংকিন স্ট্রিট ধরে একটু সামনে এগোতেই কথা হয় এক ওয়ারীর এক বাসিন্দার সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি জানান, ইসলামপুরে তার ব্যবসা আছে। এই এলাকার বাসিন্দাদেরর অনেকেরই ইসলামপুর ও নবাবপুরে ব্যবসা রয়েছে। লকডাউনের কারণে এখন তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেন না। এর আগে সারাদেশেই লকডাউন ছিল। এখন যখন লকডাউন উঠে গেছে, রাজধানী সবকিছু খোলা, তখন তাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর সরওয়ার হোসেন আলো জানান, লকডাউনে সবাই যাতে বাসায় অবস্থান করে এজন্য স্বেচ্ছাসেবীরা মাইকিং অব্যাহত রেখেছেন। কন্ট্রোল রুমের নম্বর বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফোন দিলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত লকডাউন বাস্তবায়নে তিনি কোনো সমস্যা দেখছেন না।
এদিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলমান লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে পূর্ব রাজাবাজারে ২১ দিনের লকডাউনের পরও সেখানে করোনা সংক্রমণ ৬১ শতাংশ পাওয়া গেছে। যে কারণে ওয়ারীতে লকডাউন করে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে কি না সে প্রশ্ন উঠেছে। আর এই লকডাউনে সাধারণের জীবন ও জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ থেকে জানা যায়, লকডাউন কর্মপদ্ধতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে তা কবে নাগাদ কার্যকর করা হবে বা আদৌ কার্যকর করা হবে কি না, তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। লকডাউনের পরও পূর্ব রাজাবাজারে করোনা শনাক্তের হার বেশি হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫৫ জন। আর এ পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যু ২ হাজার ৫২। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ৭৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর ৮ মার্চ সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।