‘জেলে পরিচয়, সেখানে বসেই ডাকাতির পরিকল্পনা!’
৫ জুলাই ২০২০ ১৯:০৪
ঢাকা: বিভিন্ন সময় চুরি ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পর তাদের পরিচয়। সেখানে বসেই বড় কোনো শো-রুমে ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। এরপর জেল থেকে বেরিয়েই যোগাযোগ হয় তাদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ জুন মধ্যরাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ৫৭/১৫ পান্থপথের ওয়ালটন প্লাজা (এসটি) শোরুমে আনা মালামাল ডাকাতি করে।
ওই ঘটনায় ওয়ালটন শোরুম টিম ম্যানেজার মো. রানা মিয়া (২৭) পরদিন ২৪ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তদন্তের ভিত্তিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির কাজে অংশগ্রহণকারী চারসদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রথমে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলা থেকে মো. রবিউল ইসলামকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমন, রানা ও সাথী নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রবিউল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে যে, ওই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৮/১০ জন। তাদের ডাকাতির পরিকল্পনা জেলে বসেই।
রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে শেরেবাংলানগর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, ‘ডাকাতির মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪টি ওয়ালটন ফ্রিজ, ৫টি এলইডি টেলিভিশন, একটি মোবাইল ফোন এবং ড্রাইভারের সাড়ে চার হাজার টাকা এবং হেলপারের নিকট থাকা ৮০০ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। যার মূল্য ৬ লাখ টাকার বেশি।’
শোরুমের ওই মালামালগুলোর মধ্যে থানা পুলিশ চার আসামিকে গ্রেফতার এবং ১৮টি ওয়ালটন ফ্রিজ এবং তিনটি এলইডি টেলিভিশন উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে বলে জানান ডিসি হারুন।
ডাকাতির বিবরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পান্থপথ ওয়ালটন প্লাজার (এসটি) মালামাল কিশোরগঞ্জ জেলার ডিলারের কাছে (রহমত ইলেকট্রনিকস) পৌঁছানোর কথা ছিল। সেই উদ্দেশ্যে ওয়ালটন কোম্পানির নিজস্ব পরিবহনে (ঢাকা মেট্রো ড-১১-৭০-৩৫) শোরুমের কর্মচারি জিহাদ হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, মো. তারেক হোসেনের মাধ্যমে মালামাল উঠানো হয়। এরপর পণ্যের চালান কপি ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন (৩০) এবং হেলপার মিরাজের (১৯) কাছে হস্তান্তর করে শোরুম কর্মচারিরা চলে যায়।’
হারুন-অর-রশিদের বিবরণ থেকে আরও জানা যায়, কর্মচারীরা স্থান ত্যাগ করার পরপরই একটি খালি পিকআপযোগে ৭/৮ জন দুষ্কৃতিকারী এসে তাদের হাতে থাকা চাপাতির ভয় দেখিয়ে ওয়ালটন কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভার হেলপারকে গাড়িতে ওঠায় এবং বিভিন্ন জায়গায় মালামাল নামিয়ে নেয়। পরে তারা ওই একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের পরিবহন ব্যবহার করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলা তদন্ত করছিল থানার উপ-পরিদর্শক এসআই সুমন চন্দ্র শীল। মামলা দায়েরের পর মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং আলামত উদ্ধারে কাজ শুরু করে শেরেবাংলা নগর থানা টিম।
ডিসি হারুন বলেন, ‘মামলার ঘটনার তেমন কোনো ক্লু না থাকায় তদন্ত টিমের তদন্ত শুরু করতে হয় বড় পরিসরে। প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরার সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাইসহ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই রবিউল ইসলামকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বসিলা থেকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন ‘রবিউলকে গ্রেফতারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তদন্ত টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এর এক পর্যায়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকা হতে আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতটি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়।
অন্যান্য মালামাল ও আসামিদের কথা জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, ডাকাতিতে তার চার সহযোগী মো. শাহজাহান(২৪), মেহেদী হাসান মৃধা ওরফে হাসান(২৮), মো. রনি(২৫) ও আব্দুর রহিম(২৮) ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটকের পর জেল হাজতে রয়েছেন। বাকি আসামি সুমন রানাসহ অন্যান্যরা পলাতক রয়েছে।
তথ্য যাচাইয়ের পর তদন্ত টিম ময়মনসিংহ জেলায় পৌঁছায় সেখানে হাসান ও রনির হেফাজতে থাকা দু’টি ফ্রিজ দুটি টেলিভিশন উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে রবিউল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। রবিউলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ জুলাই ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারী সুমন ও রানাকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাউচর আরশিনগর এলাকা হতে গ্রেফতার ও একটি টেলিভিশন উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে মেহেদী হাসান মৃধার দুজন আত্মীয়ের সাভার-আশুলিয়ার বাসা থেকে দুটি ফ্রিজ জব্দ করা হয়। এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যে অনুযায়ী সাথী নামে একজনকে গ্রেফতার ও তার দোকান থেকে ৬টি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীরা আন্তঃবিভাগীয় ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। জেলহাজতে থাকাকালে একে অপরের সাথে পরিচয় হয়। সেখানেই ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা।
গ্রেফতার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে আদালত সোপর্দ করা হবে বলেও জানান ডিসি হারুন।