পড়তি বাজারে খামারিদের শত কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা
৭ জুলাই ২০২০ ০৮:৩২
মেহেরপুর: প্রতিবছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন মেহেরপুরের গো খামারিরা। বছরের এই একটি সময়ের জন্যই যেন সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্নরকম। করোনার কারণে কোরবানির হাটে নেই ক্রেতার আনাগোনা। লকডাউন থাকায় পাশ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় পশুর হাট বসেনি। বাজারে গরুর দামও অনেক কমে গেছে। ফলে বর্তমান বাজার মূল্যে গরু-ছাগল বিক্রি করতে হলে শতাধিক কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়রা যে হিসাব দিচ্ছে, তাতে জেলায় কোরবানি উপযোগী গরু ও মহিষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮২টি। বর্তমান বাজার মূল্য হিসাবে প্রতিটি গরু বা মহিষে খামারিদের লোকসান হতে পারে ২০ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর বাইরে জেলায় কোরবানির উপযোগী ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬৩৮টি। প্রতিটি ছাগল বা ভেড়ায় বর্তমান বাজার মূল্যে লোকসান হতে পারে ৪ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে ছাগল খামারিদের লোকসান হবে ২৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একশ কোটি ২১ লাখ ৯২ হাজার টাকা ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন মেহেরপুরের খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলার নিবন্ধিত ও পারিবারিক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত খামারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৯০৪টি। এসব খামারে পালন করা ১ লাখ ১ হাজার ২০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নেপাল, হরিয়ানা ছাড়াও দেশি জাতের গরু বিশেষ পদ্ধতিতে পালন করার ফলে বেশ খরচ হয়েছে খামারিদের।
খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে সব ঋণ পরিশোধ করে আবার নতুন গরু কিনে পালন করবেন— অন্য বছরগুলোর মতো এবারও এমন ভাবনাই ছিল খামারিদের। এলাকার অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবক চাকরি না করে পশু পালন করে থাকেন, যাদেরও মূল লক্ষ্য এই মৌসুম। ফলে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দুয়েকটি গরু পালন করছেন, তারা রীতিমতো পুঁজি হারাবেন।
জেলা সদরের হরিরামপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম নিজের সঞ্চয় ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে ছোট একটি খামার করেছিলেন। সাতটি গরুর মধ্যে এখন চারটি গরু কোরবানির জন্য উপযুক্ত। চারটি গরু ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে তার লাভ থাকবে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী তার কাছে আসেনি। ঢাকায় গরুর হাট বসবে কি না, নিশ্চিত করে জানতে পারছেন না সে তথ্যও। সাইফুল বলেন, এখানকার বাজারে যে দাম দেখছি, তাতে চারটি গরুর দাম ১৬ লাখ টাকার বেশি পাব বলে মনে হয় না। এ দামে গরু বিক্রি করতে হলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে।
গাংনীর গরু ব্যবসায়ী আলীমুজ্জামান জানান, গেল বছর কোরবানি সময় ঢাকার কমলাপুরে ১০ ট্রাক গরু নিয়ে গিয়েছিলেন। ঈদের মাস দেড়েক আগেই গ্রামে গিয়ে গৃহস্থদের বাড়ি থেকে গরু বায়না করে আসতেন তিনি। এবার ঢাকায় গরু নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা তার নিশ্চয়তা না থাকায় গরু কেনেননি। তিনিবেলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া থেকে কয়েক হাজার গরু কিনে থাকি। এবার বেচাকেনায় কোনো ভরসা না থাকায় গরু কিনিনি এখনো। দেখি আরও কিছুদিন, কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়।
জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার অর্ধেক পশু বিভিন্ন অঞ্চলে জবাই করা হয়, বাকি অর্ধেক স্থানীয় ও ঢাকায় কোরবানির পশু হাটে তোলা হয়। বিক্রির জন্য পশুর রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অফিসের কয়েকটি দল। খামারি ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মূল্যে পশুর দাম নিশ্চিত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
কোরবানির পশু কোরবানির হাট গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তা গরুর দাম গরুর হাট ছাগলের দাম লোকসানের আশঙ্কা শত কোটি টাকা লোকসান