Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩৫ কার্যদিবসে ৬০৮ শিশুর জামিনের ‘মাইলফলক’ ভার্চুয়াল কোর্টে


৭ জুলাই ২০২০ ১০:০৭

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত যাত্রা শুরু পর ৩৫ কার্যদিবসে ৪৯ হাজার ৭৬২ আসামির জামিন হয়েছে। এর মধ্যে শিশু আদালতে জামিন হয়েছে ৬০৮ জনের। ইউনিসেফের সহায়তায় এরই মধ্যে ৫৮৩ শিশুকে তাদের অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে এত শিশুর বন্দি দশা থেকে মুক্তি ও পরিবারের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টিকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বলেও মন্তব্য অনেকের।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত ২৬ মার্চ দেশের সব আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময়ে তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ, এক হাজার ১৪৭টি শিশু বন্দি ছিল। এ অবস্থায় এসব শিশুদের নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় ছিল সমাজ সেবা অধিদফতর। বিষয়টি নজরে আসার পর আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের শিশু বিষয়ক বিশেষ কমিটির নির্দেশনা এবং শিশু আদালত ও সমাজসেবা অধিদফতরের সমন্বয়ে এসব শিশুদের জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। এরপর থেকে ভার্চুয়াল আদালত অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করে শিশুদের জামিনের আদেশ দিতে শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মে থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩৫ কার্যদিবসে সারাদেশে অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে মোট ৯৫ হাজার ৫২৩টি জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৭৬২ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন ভার্চুয়াল আদালত। আর শিশু আদলতগুলোতে এই ৩৫ কার্যদিবসে জামিন দেওয়া হয়েছে ৬০৮টি শিশুকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলব, ভার্চুয়াল কোর্ট হওয়ার ফলে বিচার ব্যবস্থা স্থবির হয়ে যায়নি। বরং ভার্চুয়াল আদালতের কল্যাণে বিচারকাজ অব্যাহত রাখা গেছে।’

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা করায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিঃসন্দেহে কমেছে। করোনার এই সময়ে যদি নিয়মিত আদালত খোলা থাকত, তখন সংক্রমণ হয়তো ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করত। কেননা নিয়মিত আদালত খোলা থাকলে সেখানে বিচারপ্রার্থী জনগণ, আইনজীবী, আইনজীবীর সহকারী, কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার অবাধ যাতায়াত থাকে। তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি তো থেকেই যেত। সেখান থেকে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারত।

তিনি বলেন, সেদিক থেকে বলা যায়, ভার্চুয়াল কোর্ট খোলা থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি কমেছে। আবার ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হলেও আদালতের কার্যক্রম চলেছে। এতে অনেক আসামির জামিন হয়েছে। এতে একটা স্থিতিশীল অবস্থা আছে। এ পর্যন্ত ভার্চুয়াল কোর্টে ৮৪ হাজার মামলার শুনানি হয়েছে, যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে মাইলফলক।

সাইফুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশে ভার্চুয়াল শিশু আদালতে অনেক জামিন হয়েছে। এটি সারাবিশ্বে একটা রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভার্চুয়াল শিশু আদালত এই মডেল এখন অনেক দেশ অনুসরণ করছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের এই ধারণা নিয়ে কাজ করছে। ইউনিসেফের এই মডেল এখন সারাবিশ্বে আদৃত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সমাজসেবা অধিদফতরের (প্রতিষ্ঠান-২) উপপরিচালক এম এম মাহমুদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে আদালতগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১ হাজার ১৪৭টি শিশু ছিল। উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ শিশু ছিল। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে আমরা খুব চিন্তায় পড়ে যাই। এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কমিটি শিশুদের একটি তালিকা করার নির্দেশ দেয়। এরপর আমরা তালিকা দাখিল করি। পরে ভার্চুয়াল শিশু আদালতে শিশুদের জামিন হয়।

করোনার এই সময়ে ভার্চুয়াল কোর্টে শিশুদের এভাবে জামিনের সুযোগ করতে পারাকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করছেন সমাজসেবা অধিদফতরের এই কর্মকর্তাও। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ এটিকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে অল্প সময়ে ব্যাপকসংখ্যক শিশুদের জামিনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে সুনাম এনে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি ৫৩টি মেয়ে শিশুসহ ৬০৮ শিশুকে গত ১২ মে থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শিশু আদালত থেকে জামিন দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে জামিন দেওয়া এসব শিশুর মধ্যে ৫৮৩টি শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে মুক্তি দিয়ে নিজ নিজ অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আর মুক্তি পাওয়া এসব শিশুর মধ্যে অনেকের অভিভাবক উন্নয়ন কেন্দ্রে না আসায় তাদেরকে ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে যেসব শিশুকে আটক করা হয়, তাদের কারাগারে না রেখে দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়। কারাগারে বড়দের সঙ্গে মিশে নতুন অপরাধে যেন জড়িত হয়ে না পড়ে, এ কারণেই শিশুদের জন্য শিশুদের উপযোগী করে গড়ে তোলা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখা হয় তাদের। গাজীপুরের টঙ্গী ও কোনাবাড়ী এবং যশোরের পুলেরহাট এলাকায় অবস্থিত শিশু কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কোনাবাড়ীতে অবস্থিত কেন্দ্রটিতে মেয়ে শিশুদের রাখা হয়। বাকি দু’টিতে রাখা হয় ছেলে শিশুদের। সমাজসেবা অধিদফতর জানিয়েছে, ভার্চুয়াল আদালতে জামিন হওয়ার পর কেন্দ্রগুলোতে প্রায় সাড়ে আটশ শিশু অবস্থান করছে।

করোনাভাইরাস জামিন ভার্চুয়াল আদালত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর