Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্যখাতের ২ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১০ প্রতিষ্ঠান!


৮ জুলাই ২০২০ ১১:২৬

ঢাকা: মেডিকেল যন্ত্রপাতির দাম বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দেখানো ছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ে সরকারের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বাস্থ্যখাতের কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাতের বেশির ভাগ কাজই বাগিয়ে নিয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, গত ৫ বছরে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনাকাটার কাজ। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ রয়েছে। ফলে আত্মসাৎ হয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্রে জানা যায়, বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেনের আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে পাঁচটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, ফরিদপুরসহ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে যন্ত্রাপতি সরবরাহ করে তার প্রতিষ্ঠানগুলো। অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় শত কোটি টাকা। সম্প্রতি ১৪ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানগুলোও কালো তালিকাভুক্ত করেছে সরকার।

অন্যদিকে ঠিকাদার জাহের উদ্দিন সরকারের নিজ নামে এবং আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক, মার্কেন্টাইল ট্রেড এবং ইউনিভার্সেল ট্রেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে জাহের উদ্দিন প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে দুদক।

স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে আলোচিত ঠিকাদার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবজাল হোসেন। তিনি নামে-বেনামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রহমান ট্রেড, রুলমান ট্রেড ও রূপা ফ্যাশনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। স্ত্রীসহ আবজাল এখন বিদেশে পলাতক রয়েছেন। স্ত্রীসহ আবজালের বিরুদ্ধে গত বছর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

বিজ্ঞাপন

দুদকের পাঁচ বছরের তথ্য বলছে, শুধু সাজ্জাদ, জাহের কিংবা আবজাল নয়, স্বাস্থ্যখাতে প্রভাবশালী এমন আরও সাতজন ঠিকাদার রয়েছেন- যাদের সবার বিরুদ্ধেই প্রায় একই অভিযোগ। এমএইচ ফার্মার মোসাদ্দেক হোসেন, ম্যানিলা মেডিসিনের মনজুর আহমেদ, অভি ড্রাগসের জয়নাল আবেদিন, আলভিরা ফার্মেসির আলমগীর হোসেন, এসএম ট্রেডার্সের মোহাম্মদ মিন্টু, পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নজরুল ইসলাম ও আরসিএস এন্টারপ্রাইজের রবিউল আলমরা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যন্ত্রপাতির অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে সরকারের গচ্ছা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

এদিকে ৯ জুন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব হাসান মাহমুদের সই করা এক চিঠিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর এরই মধ্যে ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও স্বত্ত্বাধিকারী রুবিনা খানম, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব রক্ষক মো. আবজাল হোসেনের স্ত্রী; মেসার্স অনিক ট্রেডার্স ও স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন; মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ও মুন্সী ফররুখ হোসাইন; মেসার্স ম্যানিলা মেডিসিন অ্যান্ড মেসার্স এস কে ট্রেডার্স ও স্বত্ত্বাধিকারী মনজুর আহমেদ; এমএইচ ফার্মা ও স্বত্ত্বাধিকারী মোসাদ্দেক হোসেন; মেসার্স অভি ড্রাগস ও স্বত্ত্বাধিকারী মো. জয়নাল আবেদীন; মেসার্স আলবিরা ফার্মেসি ও স্বত্ত্বাধিকারী মো. আলমগীর হোসেন; এস এম ট্রেডার্স ও স্বত্ত্বাধিকারী মো. মিন্টু; মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও স্বত্ত্বাধিকারী মো. আব্দুস সাত্তার সরকার ও মো. আহসান হাবিব; বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিকেল কোম্পানি ও মো. জাহের উদ্দিন সরকার; ইউনির্ভাসেল ট্রেড করপোরেশন ও মো. আসাদুর রহমান; এ এস এল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফতাব আহমেদ এবং ব্লেয়ার এভিয়েশন ও স্বত্ত্বাধিকারী মো. মোকছেদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুদক ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে আমাদের একটি চিঠি দেয়। অর্থাৎ, দুদক থেকে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন কাজ না দেয়। আমরা সেজন্য তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছি এবং কাজ না দিতে বলেছি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে যেন তারা আর কোনো কাজ না পায় সেটার ব্যবস্থাও করেছি।’

স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কমিশন প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা, সাতক্ষীরা, রংপুর , চট্টগ্রাম, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও কমিশন থেকে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এই ১১টি মামলায় সম্পৃক্ত ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।’

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যারাই দুর্নীতি করবে তাদের সবাইকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

কালো তালিকাভূক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুদক স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্যখাত

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর